শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫

মনে পড়ে




মনে পড়ে
---------------------------------------------------------------------------------------------------------

অনিক বসে আছে জানালার পাশে। আজ আকাশে মেঘের ঘনঘটা। দমকা হাওয়া বইছে। দেখতে দেখতে আকাশ থেকে শুরু হলো বৃষ্টি। মনে পড়ে গেলো কিছু স্মৃতি। মোবাইলটা ঘাটতে গিয়ে চোখে পড়লো ইনবক্সে জমে থাকা চার বছর পুরোনো কিছু ম্যাসেজ।

যখনি সময় পায় পুরোনো ম্যাসেজ গুলো দেখে সে। চারটি বছর পেরিয়ে গেলো। তবুও অনিক ইরাকে ভুলতে পারে নি। তাই, চার বছর পুরোনো ম্যাসেজ গুলোকে এখনো খুব যত্নে বুকে আগলে রাখে ইরার স্মৃতি হিসেবে।
ইরার হয় তো এখন আর অনিকের কথা মনে নেই। অনিকের দেয়া অর্থহীন ম্যাসেজ গুলোও হয় তো তার মোবাইলে এখন আর নেই। না থাকারই কথা। মানুষ কখনো অপ্রয়োজনীয় কিছু নিজের কাছে রাখে না। এ ম্যাসেজ গুলো ইরার কাছে অর্থহীন হলেও অনিকের কাছে তা অনেক কিছু।

এখন আর সে গান গায় না। গিটারটায় ধুলো পড়ে আছে। মাঝে মাঝে জোছনা রাতে বাঁশি বাজায়। বাঁশির সুর আর জোছনা মিলেমিশে একাকার হয়ে অদ্ভুত এক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
কখনো বা কোনো ঝড়ের রাতে ছাঁদ থেকে ভেসে আসে বেহালার এক করুন সুর। টপটপ করে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা চোখের জল।
এখন আর সে কবিতা লিখে না। খালি পড়ে থাকে তার কবিতার খাতাটা।সে এখন আর স্বপ্ন দেখে না। হয় তো স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছে।

আজ তার অনেক ইচ্ছে করছে একবার ইরার সেই কোমল স্বরটা শুনতে। তবে হয় তো তা আর সম্ভব নয়।
সময় বদলে যায়। সময়ের সাথে বদলে যায় কিছু মানুষ। চেনা মানুষ গুলোও তখন কেমন অচেনা হয়ে যায়। তবে কিছু মানুষ কখনোই বদলাতে পারে না। তারা আগের মতোই থেকে যায়। কারন, তাদের সময়টা হয় তো থেমে থাকে। থমকে যায় জীবনের পথের কোন এক বাঁকে। আর হয় না পথ চলা।

লেখকঃ জোহেব

শেষ গান




শেষ গান
-------------------------------------

"কেমন আছো,ইরা?"
অনেক দিন পর সেই পরিচিত কন্ঠস্বর। পেছনে ফিরে তাকায় ইরা।দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মুহিব।
মাত্র ছয় মাস হলো,মুহিবের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। এ ছয় মাসেই কন্ঠটা কেমন যেনো অপরিচিত লাগছে।
চেহারাটাও কেমন যেনো বদলে গেছে।মুহিবের চেহারায় সেই উজ্জল ভাবটা আর নেই।চেহারাটায় কেমন যেনো একটা গাঢ় বিষাদের ছায়া পড়েছে।
তবুও চেহারায় রয়েছে হাসি।হৃদয় ভাঙ্গার হাসি হয় তো একেই বলে।

ইরা শান্তস্বরে জবাব দেয়,"ভালো।"
এরপর তাকিয়ে থাকে নিচের দিকে।

সত্যিই আজ ইরাকে অপূর্ব লাগছে। যেনো কোন সর্গের অপ্সরী পৃথিবীতে নেমে এসেছে।
এতক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধু অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলো মুহিব। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলো।
আর কিছুক্ষন পরই তো অন্য কারো হয়ে যাবে ইরা। শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?
ইরা কিছু একটা বলতে চায়। তবে তার আগেই অন্যদিকে চলে যায় মুহিব।

বিয়ে বাড়িতে তার অনেক কাজ।তার উপর দ্বায়িত্ব পড়েছে অনেক।
বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রেখে হৃদয়ের চাপা কষ্টটা ভুলে থাকায় ব্যার্থ চেষ্টা। আর তো কিছুক্ষন।এরপরই তো তার ইরা এ সময়টা নিজেকে সামলে নিতে পারলেই চলে।

গেটের দিকে পা বাড়ায় মুহিব।
ইরার বাবার সামনা সামনি হয়ে যায় সে,"আরে মুহিব।কোথায় যাচ্ছো? বরযাত্রি তো এসে গেলো।"
মুহিবঃ"শরীরটা ভালো লাগছে না,আঙ্কেল।আমি একটু আসি।"

গেটের বাইরে পা বাড়ায় মুহিব।কিছুটা দূরে চলে আসে।
হয় তো সে ইরার যোগ্য ছিলো না।তাকে পাওয়ার কোন অধিকারই তার নেই।
দীর্ঘ চারটি বছর যাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলো,আজ তাকে অন্য কারো হয়ে যেতে সে কি করে দেখবে?
এতক্ষন সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা কষ্ট গুলো অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়ে।

শেষ বারের মতো ইরাকে ম্যাসেজ দিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে নেয় মুহিব।
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাসের পর হাটতে থাকে কোন এক অজানা গন্তব্যের দিকে।

কিছুদিন পর...
বিয়ের প্রেজেন্টেশনের সব উপহার গুলোই দেখা হয়েছে।শুধু মাত্র মুহিবের দেয়া উপহারের প্যাকেটটিই এখনো খুলে দেখে নি ইরা।রেখে দিয়েছে।
আজ বিকেলে প্যাকেটটি খুললো।প্যাকেট থেকে বেরিয়ে আসে মুহিবের দেয়া নীল রঙের শাড়ি।ইরার প্রিয় রং নীল।
সাথে একটি ছোট্ট প্যাকেট ও রয়েছে ভেতরে।প্যাকেটটা খুলে দেখে ইরা।
ভেতরে রয়েছে ইরার কিছু ভাঙ্গা চুড়ি।যা একদিন মুহিবের সাথে বেড়াতে গিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো।

নিজের পুরোনো নাম্বারটা খোলে ইরা।বিয়ের দিনের পর এ নাম্বারটা বন্ধ রেখেছিলো সে।
নাম্বারটা খুলতেই মোবাইলের স্কিনে ভেসে আসে একটা ম্যাসেজ।
যে গানটা মুহিব প্রায়ই ইরাকে শোনাতো,সেই গানটা।
ভেসে উঠে কিছু লাইনঃ
"শ্যাম বালিকা,তুমি জানো কি?
তোমার জন্য বয়ে যায়,হৃদয়ে শ্রাবণ ধারাটি।"

লেখকঃ জোহেব

একটি চিঠি ও কিছু অব্যাক্ত কথা




একটি চিঠি ও কিছু অব্যাক্ত কথা
-------------------------------

রাজকুমারী,
মনে আছে কি আজকের দিনটির কথা। ১৮ নভেম্বরের শীতের সকালের কথা। এদিন সকাল ৭.১৫ মিনিটে আমরা সারাজীবনের জন্য এক বন্ধনে আবদ্ধ থাকার শপথ করেছিলাম।
বলেছিলাম, কখনো তোমার হাতটা এক মূহুর্তের জন্যও ছাড়বো না।সারা জীবন তোমায় বুকে আগলে রাখবো।

সেদিন তো তুমিও বলেছিলে, কখনো আমার হাতটা এক মূহুর্তের জন্যও ছাড়বে না।
তবে জানো কি, সময়ের স্রোতে হয় তো মানুষ গুলোও বদলে যায়। চেনা মানুষ গুলোও কেমন যেনো অচেনা হয়ে যায়। ভূলে যায় তাদের দেয়া ওয়াদা গুলো। হয় তো আজ তুমিও ভুলে গেছো।
তুমিও হয় তো অনেক বদলে গেছো।

জানো,তোমার দেখানো স্বপ্ন গুলো এখনো আমার চোখে ভাসে।
ইচ্ছে ছিলো তোমায় নিয়ে একটা ছোট্ট ঘর বানাবো।
যে ঘরের দরজাটা হবে বিশ্বাসের, জানালাটা হবে আদরের, ছাদটা হবে ভালোবাসার। আর পুরো ঘর জুড়ে থাকবে শুধু ভালোবাসা।

তোমায় নিয়ে স্বপ্ন বুনতাম, তোমায় নিয়ে কোন এক গধুলী বিকেলে নদীর পাড়ে তোমার হাতটা শক্ত করে ধরে বহুদূর হেটে যাবো।
কোন এক জোছনা রাতে বারান্দায় তোমায় নিয়ে জোছনা দেখবো।
কোন এক শিশির ভেজা সকালে তোমার চোখে স্বপ্ন বুনবো।
দু'জন দু'জনকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোবেসে যাবো।

তবে কি জানো?স্বপ্ন তো স্বপ্নই। তা যে কখনো বাস্তবে রুপান্তরিত হওয়ার নয়।
তবুও প্রায়ই আমি তোমার দেখানো স্বপ্ন গুলো দেখি। তবে যখন ঘুম ভাঙ্গে, তখন আমার স্বপ্ন গুলোও চলে যায়। ঝড়া বকুলের মতো শুধু যার স্মৃতিটাই পড়ে থাকে।
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।বুকের বাম পাশের সেই চিনচিনে ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে।

জানো,এখনো যখন চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। রাত নিঝুম হয়। তখন তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। স্মৃতির পাতা হাতরে বেড়াই। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখি তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত।

এখনো প্রতিদিন সকালে মনে হয়। কেউ একজনের ফোন আসবে। মায়া ভরা কন্ঠে বলবে,"শুভ সকাল।"
তবে পরক্ষনেই মনে হয় সেই চিরচেনা নাম্বারটা থেকে আর কখনোই ফোন আসবে না।
কোন এক রাতে কেউ ফোন দিয়ে ফিসফিস করে বলবে না, "ভালোবাসি।"

জানো,এখনো মাঝে মাঝে আমার বিশ্বাস হয় না, আমার সেই রাজকুমারীটা এতোটা বদলে গেছে।
আমার রাজকুমারীটা তো এমন ছিলো না। তবে কেনো এতোটা বদলে গেলো?- নিজেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে বেড়াই।

পরক্ষনেই ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠে, একদিন একটা ঝড় এসেছিলো। সেই ঝড়টা আমার কাছ থেকে আমার রাজকুমারীটাকে কেড়ে নিয়ে গেলো। বদলে গেলো আমার রাজকুমারীটা।
এতোটাই বদলে গেলো যে, আমি তখন আমার আগের রাজকুমারীটা আর এই রাজকুমারীটাকে মিলাতে পারছিলাম না।
জানো,মাঝে মাঝে মনে হয়, তুমি কি আমার সেই রাজকুমারীটা?

হয় তো আমার ভুলে গিয়েছো। হয় তো আমায় ছাড়া তুমি ভালোই আছো। তবুও দূর থেকে তোমার ভালোই চাইবো।

না হয় স্মৃতির পাতায় ক্ষনিকের জন্য উড়ে আসা একটা রঙিন প্রজাপতি হয়েই রইলে।
যে প্রজাপতিটাকে নিয়ে জীবনের বাকিটা পথ চলতে চেয়েছিলাম।
তবে সে মাঝ পথেই উড়ে গেলো, হারিয়ে গেলো কোন এক দিগন্তে। আর আমি পথিক সে পথের ধারেই দাঁড়িয়ে রইলাম।

জানি, হয় তো কখনোই এই চিঠি গুলো তোমায় কাছে পৌছবে না। তবুও লিখে যাই।
ভালো থেকো রাজকুমারী। অনেক ভালো থেকো।

ইতি,
.............

লেখকঃ জোহেব