শেষ গান
-------------------------------------
"কেমন আছো,ইরা?"
অনেক দিন পর সেই পরিচিত কন্ঠস্বর। পেছনে ফিরে তাকায় ইরা।দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মুহিব।
মাত্র ছয় মাস হলো,মুহিবের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। এ ছয় মাসেই কন্ঠটা কেমন যেনো অপরিচিত লাগছে।
চেহারাটাও কেমন যেনো বদলে গেছে।মুহিবের চেহারায় সেই উজ্জল ভাবটা আর নেই।চেহারাটায় কেমন যেনো একটা গাঢ় বিষাদের ছায়া পড়েছে।
তবুও চেহারায় রয়েছে হাসি।হৃদয় ভাঙ্গার হাসি হয় তো একেই বলে।
ইরা শান্তস্বরে জবাব দেয়,"ভালো।"
এরপর তাকিয়ে থাকে নিচের দিকে।
সত্যিই আজ ইরাকে অপূর্ব লাগছে। যেনো কোন সর্গের অপ্সরী পৃথিবীতে নেমে এসেছে।
এতক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধু অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলো মুহিব। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলো।
আর কিছুক্ষন পরই তো অন্য কারো হয়ে যাবে ইরা। শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?
ইরা কিছু একটা বলতে চায়। তবে তার আগেই অন্যদিকে চলে যায় মুহিব।
বিয়ে বাড়িতে তার অনেক কাজ।তার উপর দ্বায়িত্ব পড়েছে অনেক।
বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রেখে হৃদয়ের চাপা কষ্টটা ভুলে থাকায় ব্যার্থ চেষ্টা। আর তো কিছুক্ষন।এরপরই তো তার ইরা এ সময়টা নিজেকে সামলে নিতে পারলেই চলে।
গেটের দিকে পা বাড়ায় মুহিব।
ইরার বাবার সামনা সামনি হয়ে যায় সে,"আরে মুহিব।কোথায় যাচ্ছো? বরযাত্রি তো এসে গেলো।"
মুহিবঃ"শরীরটা ভালো লাগছে না,আঙ্কেল।আমি একটু আসি।"
গেটের বাইরে পা বাড়ায় মুহিব।কিছুটা দূরে চলে আসে।
হয় তো সে ইরার যোগ্য ছিলো না।তাকে পাওয়ার কোন অধিকারই তার নেই।
দীর্ঘ চারটি বছর যাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলো,আজ তাকে অন্য কারো হয়ে যেতে সে কি করে দেখবে?
এতক্ষন সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা কষ্ট গুলো অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়ে।
শেষ বারের মতো ইরাকে ম্যাসেজ দিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে নেয় মুহিব।
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাসের পর হাটতে থাকে কোন এক অজানা গন্তব্যের দিকে।
কিছুদিন পর...
বিয়ের প্রেজেন্টেশনের সব উপহার গুলোই দেখা হয়েছে।শুধু মাত্র মুহিবের দেয়া উপহারের প্যাকেটটিই এখনো খুলে দেখে নি ইরা।রেখে দিয়েছে।
আজ বিকেলে প্যাকেটটি খুললো।প্যাকেট থেকে বেরিয়ে আসে মুহিবের দেয়া নীল রঙের শাড়ি।ইরার প্রিয় রং নীল।
সাথে একটি ছোট্ট প্যাকেট ও রয়েছে ভেতরে।প্যাকেটটা খুলে দেখে ইরা।
ভেতরে রয়েছে ইরার কিছু ভাঙ্গা চুড়ি।যা একদিন মুহিবের সাথে বেড়াতে গিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো।
নিজের পুরোনো নাম্বারটা খোলে ইরা।বিয়ের দিনের পর এ নাম্বারটা বন্ধ রেখেছিলো সে।
নাম্বারটা খুলতেই মোবাইলের স্কিনে ভেসে আসে একটা ম্যাসেজ।
যে গানটা মুহিব প্রায়ই ইরাকে শোনাতো,সেই গানটা।
ভেসে উঠে কিছু লাইনঃ
"শ্যাম বালিকা,তুমি জানো কি?
তোমার জন্য বয়ে যায়,হৃদয়ে শ্রাবণ ধারাটি।"
লেখকঃ জোহেব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন