শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

অপেক্ষার প্রহর



অপেক্ষার প্রহর
---------------------------------------------------------------------------

আজ ২ সেপ্টেম্বরদিনটি আরাফের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিনআজ তাকে সকাল থেকেই ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে
সকালে গিয়ে দোকানে ফুলের অর্ডার দিয়ে এলোনিজের জন্য নতুন পাঞ্জাবি কিনলো
আজকের দিনটা তার জন্য স্মরণীয় একটি দিনকারন, এই দিনটির সাথে তার কিছু পুরোনো স্মৃতি জড়িয়ে আছে
অন্যদিকে, আরাফের মা-বাবাকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছেতারা বসে বসে ভাবছেন, তাদের সন্তান কি কোন দিনই এ রোগ থেকে মুক্তি পাবে না ???

৫ বছর আগের কথা................................................

আরাফ ঘুমোচ্ছিলোতার খেয়াল নেই যে আজ বিকেলে নিহার সাথে দেখা করতে হবেতার ঘুম ভাঙ্গলো নিহার ফোনে
আরাফঃ " হ্যালো।"
নিহাঃ " তুমি কোথায় ?"
আরাফঃ "এই তো ঘুমুচ্ছি"
নিহাঃ " আজ সকালে কি বলেছিলাম খেয়াল আছে?"
আরাফঃ" ও, স্যরিআমি ভুলে গিয়েছিলামএকটু wait করো আমি আসছি।"

ফোনটা কেটে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলো আরাফআজ তার প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে তাই নতুন পাঞ্জাবিটা পড়ে নিলো
নিহার গোলাপ অনেক পছন্দতাই, যাওয়ার সময় দোকান থেকে কিছু গোলাপ কিনে নিলো
পার্কের গেইট দিয়ে ঢুকেই দেখলো নিহা তার জন্য অপেক্ষা করছে
নিহা আরাফকে দেখতে পায় নিতাই, আরাফ নিহাকে চমকে দেয়ার জন্য পিছন দিয়ে গিয়ে হঠাৎ নিহার সামনে ফুল গুলো ধরলো
তবে নিহা আজ চমকালো না
আজ নিহাকে কেমন যেনো অন্যরকম লাগছেআরাফ আগের নিহা আর এখনকার নিহাকে মিলাতে পারছে না

নিহাঃ" তোমাকে কিছু জরুরী কথা বলার ছিলো"
আরাফঃ" কি কথা?"
নিহাঃ"আমাকে ভুলে যাও"
আরাফঃ " কেনো?"
নিহাঃ"আমি তোমাকে ভালবাসতে পারবো না।"
আরাফঃ" কিন্তু কেনো?"
নিহাঃ" আমার বাবা- মা অন্য যায়গায় আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেছেলে আমেরিকার এক বড় কোম্পানিতে চাকুরী করে
আমি আমার বাবা-মার মতের বিরুদ্ধে যেতে পারবো নাআর ছেলেটা আমার জন্য একদম যোগ্য পাত্র।"
আরাফঃ" আমি কি তোমার অযোগ্য? তোমার ভালোবাসা পাওয়ার কোন আধিকার কি আমার নেই। "
নিহা রেগে গিয়ে বললোঃ" কি আছে তোমার? ওর মতো ভালো চাকুরী আছে? তুমি তো এখনো বেকার।"
আরাফঃ" আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করোএকটা চাকুরী ঠিকই খুঁজে নিবো।"
নিহাঃ" এই কথা তো কতো আগে থেকেই শুনে আসছি।"
আরাফঃ" আমাকে আর কয়েকটা দিন সময় দাও।"
নিহাঃ" তোমাকে অনেক সময় দেয়া হয়েছেআর না।"
আরাফঃ" প্লিজ, এমন করো নাআমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।"
নিহাঃ" থাকার অভ্যাস করে নাও।"

আরাফ নিহাকে অনেক অনুরোধ করলোতবে নিহা তার কোন অনুরোধই শুনলো না
নিহা চলে যাওয়ার পর আরাফ কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো
হঠাৎ, করে বৃষ্টি নামলোআরাফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে
আরাফের চোখ দিয়েও বৃষ্টি ঝড়ছেতবে বৃষ্টির কারনে তা দেখা যাচ্ছে না
দিনটা ছিলো ২ সেপ্টেম্বর

সেদিন আরাফ বাড়িতে ফেরার পর তার বাবা-মা দেখলো আরাফ কেমন যেনো চুপচাপ হয়ে গেছেকারো সাথে কথা বলছে নাকোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে নাতার বাবা-মা প্রথম দিন বিষয়টি বুঝতে পারে নি
তবে দিন যতো যাচ্ছে সমস্যা ততো বেড়েই চলেছেআরাফ সারাদিন দরজা বন্ধ করে বারান্দায় বসে থাকেকারো সাথে কথা বলে নাখাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেতাকে কিছু বললে ও উত্তর দেয় না
এভাবে এক মাস যাওয়ার পর তার বাবা-মা তাকে একজন মানুষিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন
ডাক্তার তাকে কয়েক দিন পর্যবেক্ষন করার পর বললেনঃ" আরাফের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপপ্রচন্ড মানুষিক ধাক্কার কারনে তার এমন হয়েছেতাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবেনা হয় আরাফের মানসিক অবস্থা আরো খারাপের দিকে চলে যাবে।"

আরাফের বাবা-মা চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেনদুই বছর ধরে চিকিৎসা চললো
ডাক্তাররা তাকে এই অবস্থা থেকে কিছুটা বের করতে পারলে ও পুরোপুরি বের করতে পারেন নি

এরপর থেকে প্রতি বছর ২ সেপ্টেম্বর সে ভালোবাসা দিবস পালন করেসকলের জন্য ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস হলেও আরাফের জন্য ২ সেপ্টেম্বর ভালোবাসা দিবস
কারন, এই দিন সে তার ভালোবাসাকে হারিয়েছেতাই সে প্রতিবছর এই দিনে ভালোবাসা দিবস পালন করে

প্রতিবছর এই দিনে যেই যায়গাটায় নিহা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো সে যায়গাটাকে আরাফ ফুল দিয়ে সাজায়
তাছাড়া, এই দিন সে নতুন পাঞ্জাবি পড়ে, হাতে কয়েকটা গোলাপ ফুল নিয়ে আসে
এরপর সে নিজে নিজে কিছুক্ষন কথা বলেকিন্তু তার মনে হয় সে নিহার সাথে কথা বলছে
সে নিহাকে দেখে কিন্তু অন্যকেউ দেখে না
এরপর, সন্ধ্যা হলে আরাফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিহার চলে যাওয়া দেখেতখন তার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু ঝড়েএরপর সে চলে যায়

লেখকঃ জোহেব

বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০১৪

মনে পড়ে গেলো



আজ সকাল থেকে আকাশটা কেমন যেনো মেঘলা দেখা যাচ্ছেফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হচ্ছে
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি আকাশে চলছে মেঘের আনাগোনাএ আবস্থায় কোন কাজেই মন বাসছে না
তাই, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম

মনে পড়ে গেলো কিছু পুরোনো স্মৃতিযে স্মৃতি গুলো আমার জীবনের সব চেয়ে মূল্যবান স্মৃতি
আজ তোমার কথা খুব মনে পড়ছেকতো দিন ধরে তোমায় দেখি নাতুমি কেমন আছো? কোথায় আছো তাও জানি না
তবে এখন সেই মূহুর্তটির কথা মনে পড়ছে, যখন তুমি আর আমি এক সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম
হয়তো আমি তখন বুঝতে পারি নি, যে এটাই আমাদের এক সাথে শেষ বৃষ্টিতে ভিজাবুঝলে হয়তো তোমাকে সে দিন যেতে দিতাম না
এরপর তুমি আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলেবাস্তবতা তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিলো
কেটে গেলো দীর্ঘ চারটি বছরজীবনের যান্ত্রিকতার সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে আমি আজ ক্লান্ত

আজ তুমি কোথায় আছো জানি নাতবে ইচ্ছে করছে তোমার সাথে আবার বৃষ্টিতে ভিজতেতবে তা হয়তো আর সম্ভব নয়

লেখকঃ জোহেব

মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০১৪

তোমায় ভালোবেসেছিলাম


                                                              


                            তোমায় ভালোবেসেছিলাম
                            -----------------------------------------
                                   কবিঃ জোহেব
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

তোমায় ভালোবেসেছিলাম,
এই কি মোর অপরাধ?
আমার এ হৃদয় তোমাকে দিয়েছিলাম,
এই কি মোর অপরাধ?

এই জগতে যারা ভালোবাসে,
মন থেকে
ভালোবাসাতো চলে যায়,
তাদের জীবন থেকে
প্রতারিত হয়,
তারাই বার বার
তোমায় ভালোবাসা কি,
ছিলো মোর অপরাধ?

এ জগতে যারে ভাবি আপন,
সেই তো বারবার পর হয়ে যায়
সচ্ছ মনে ভালোবাসিলে,
কেউ কি কখনো ভালোবাসা পায়
আমার জীবন তোমারে সপে ছিলাম,
এই কি ছিলো মোর অপরাধ?

কবিতা গুলো যে সব তোমায় নিয়ে লিখা,
ছবি গুলো যে সব তোমায় নিয়ে আঁকা
মুছতে চাইলেও কি,
মুছতে পারি আর?
তোমায় ভালোবাসা ই কি,
মোর অপরাধ?

বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

যখন একটি পদার্থকে তাপ দেওয়া হয়, তখন পদার্থের অনুগুলোর আন্তঃআণবিক শক্তি কমতে থাকে ও অনুগুলোর মধ্যকার দূরত্ব বাড়তে থাকে।
তেমনই ভাবে যখন একটি মানুষকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, তখন তার কাছে আপনি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন এবং সে আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।----- জোহেব

মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০১৪

সারাটি জীবন তোর পাশে থাকবো

আজ মীরার মন খারাপ। কারন, আজ ১০ম শ্রেণীর বিদায় অনুষ্ঠান। তার মনের ভেতর অনেক গুলো কথা জমা হয়ে আছে। আজ কথা গুলো না বলতে পারলে হয়তো আর কখনোই বলা হয়ে উঠবে না।
আজ যে তাকে অর্ক এর কাছে তার মনের কথা গুলো জানাতেই হবে।

অর্ক মীরার বন্ধু। ছোট বেলা থেকেই দু'জন এক সাথে পড়া-লেখা করছে। মীরা অর্ককে ভালোবাসে। তবে অর্কর সামনে এ কথা বলার সাহস মীরার কোন দিনই হয় নি।

অন্যদিকে, অর্কর ও ঠিক একই কারনে মন খারাপ। সেও মীরাকে ভালোবাসে। তবে সে এ কথা প্রকাশ করার সাহস কোন দিন পায় নি।

আজ অর্ক সাদা রঙের পাঞ্জাবী পড়ে একটা বেঞ্চে বসে আছে। হঠাৎ, করে দেখলো মীরা হল রুমে ঢুকছে।
কালো শাড়ীতে মীরাকে অপ্সরীর মতো দেখচ্ছে। অর্ক কিছুক্ষন সে দিকে তাকিয়ে থেকে এরপর অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন চিন্তা করছিলো।

এ দিকে মীরা অর্ককে দেখেছে। দেখে ও না দেখার ভান করে অন্যদিকে চলে গেলো। কারন, সে জানে সে আজ তার মনের কথা বলতে পারবে না।

সব সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্ক ও মীরাকে এক সাথে দেখা যেতো। তবে আজ তারা একে অপরের থেকে অনেক দূরে দূরে বসেছে।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর অর্ক মীরার সাথে দেখা না করেই বাড়িতে চলে গেলো।
অন্যদিকে, মীরাও অর্ককে না দেখতে পেয়ে বেশি খোঁজাখুজি করলো না।
তবে বাড়িতে এসে বালিশে মুখ লুকিয়ে কিছুক্ষন কান্না করলো।

অন্যদিকে, অর্কর একটা স্বভাব ছিলো ডায়েরী লেখা। সে সব সময় ডায়েরী লিখতো। সে তার সকল কথা ডায়েরীতে লিখে রাখতো। আজ সে ডায়েরীতে লিখলোঃ " না বলা কথা গুলো আজও বলা হলো না। হয়তো আর কখনোই বলা হবে না"। কথাটা লিখার পর অর্ক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

এস.এস. সি. পরীক্ষার পর অর্ক ঢাকা চলে গেলো। আর মীরা খুলনায় চলে গেল।
তারা দু'জন আলাদা আলাদা স্থানে থাকলে ও তাদের মন এক সাথে থাকতো। অর্ক বেশির ভাগ সময় মীরাকে নিয়ে ভাবতো। আর মীরাও সারাদিন অর্ককে নিয়ে ভাবতো।

এভাবে কেটে গেলো ৮টি বছর। অর্ক ও মীরা দু'জনেই অনার্স শেষ করে মাস্টার্স এ পড়ছে। এখনো তারা দু'জন দু'জন কে তত টাই ভালোবাসে যতোটা আগে বাসতো।

মীরা এখন ঢাকায় থাকে।
একদিন অর্ক ঢাকার রমনা পার্কে বসেছিলো। অর্ক সব সময় তার ডায়েরীটাকে সাথে রাখতো। আজও ডায়েরীটা সাথে নিয়ে এসেছে।
আজ অর্ক একটু অন্যমনস্ক ছিলো, তাই সে যাওয়ার সময় ভুলে ডায়েরীটা পার্কের যে স্থানে বসেছিলো সে স্থানে ফেলে এসেছে।

সৃষ্টিকর্তা সে দিন হয়তো মুখ তুলে তাকিয়ে ছিলেন তাদের দিকে।
কিছুক্ষন পর মীরা রমনা পার্কে গেলো। এবং সে স্থানটিতে বসলো যেখানে অর্ক বসেছিলো।
সে দেখতে পেলো একটি ডায়েরী পড়ে আছে। সে ডায়েরীটি হাতে নিয়ে খুললো।
ডায়েরীর প্রথম পাতায় অর্ক তার ছবি রেখেছিলো। যার ফলে ছবিটি দেখেই মীরা চিনতে পারলো, এ যে তার প্রিয় মানুষটির ডায়েরী। এরপর সে পুরো ডায়েরীটা পড়ে বুঝতে পারলো অর্ক তাকে কতোটা ভালোবাসে।

অন্যদিকে, অনেক দূরে যাওয়ার পর অর্কর মনে হলো সে তার ডায়েরীটা পার্কে ফেলে এসেছে। হঠাৎ, তার বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো। সে তার সমস্ত পুরোনো স্মৃতি গুলো এ ডায়েরীতে লিখে রেখেছিলো।
এ তখনই ছুটে গেলো রমনা পার্কে। গিয়ে সে দেখলো সেখানে মীরা বসে আছে। মীরার হাতে তার ডায়েরীটি।
এমনটা কখনো হবে অর্ক কখনো স্বপ্নেও ভাবে নি।

অর্ককে দেখে মীরা উঠে আসলো, অর্কর সামনে দাঁড়ালো। অর্ক দেখলো মীরার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ছে। তারা দু'জন ই দু'জন কে চিনতে পেরেছে।
হঠাৎ, মীরা বলে উঠলোঃ " এতো ভালোবাসিস আমায়? কোন দিন বললি না কেনো?
অর্ক বললোঃ " বলার অনেক চেষ্টা করেছি তবে বলতে পারিনি।"

আজ অর্ক ও মীরার বিয়ে। মীরা অর্ককে বললোঃ " কিরে কেমন লাগছে আমাকে? "
অর্ক বললোঃ" লাগছে তো, পেত্নির মত।"
মীরাঃ" কি আমি পেত্নি ? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা?"
অর্কঃ " ওরে পেত্নির অত্যাচার শুরু হয়ে গেলো রে। তা অভ্যাস করে নেই, কারন সারাটি জীবন তো এই পেত্নির অত্যাচার ই সহ্য করতে হবে।"
মীরাঃ" সত্যি করে বল, আমাকে ছেড়ে কোতাহ ও যাবি না। সারাটি জীবন এভাবেই আমার পাশে থাকবি।"
অর্কঃ কথা দিচ্ছি। সারাটি জীবন তোর পাশে থাকবো।"

লেখকঃ জোহেব।