
---------------------------------------------------------------------------
আজ ২ সেপ্টেম্বর। দিনটি আরাফের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ তাকে সকাল থেকেই ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে।
সকালে গিয়ে দোকানে ফুলের অর্ডার দিয়ে এলো। নিজের জন্য নতুন পাঞ্জাবি কিনলো।
আজকের দিনটা তার জন্য স্মরণীয় একটি দিন। কারন, এই দিনটির সাথে তার কিছু পুরোনো স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
অন্যদিকে, আরাফের মা-বাবাকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছে। তারা বসে বসে ভাবছেন, তাদের সন্তান কি কোন দিনই এ রোগ থেকে মুক্তি পাবে না ???
৫ বছর আগের কথা................................................
আরাফ ঘুমোচ্ছিলো। তার খেয়াল নেই যে আজ বিকেলে নিহার সাথে দেখা করতে হবে। তার ঘুম ভাঙ্গলো নিহার ফোনে।
আরাফঃ " হ্যালো।"
নিহাঃ " তুমি কোথায় ?"
আরাফঃ "এই তো ঘুমুচ্ছি"
নিহাঃ " আজ সকালে কি বলেছিলাম খেয়াল আছে?"
আরাফঃ" ও, স্যরি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম। একটু wait করো আমি আসছি।"
ফোনটা কেটে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলো আরাফ। আজ তার প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে তাই নতুন পাঞ্জাবিটা পড়ে নিলো।
নিহার গোলাপ অনেক পছন্দ। তাই, যাওয়ার সময় দোকান থেকে কিছু গোলাপ কিনে নিলো।
পার্কের গেইট দিয়ে ঢুকেই দেখলো নিহা তার জন্য অপেক্ষা করছে।
নিহা আরাফকে দেখতে পায় নি। তাই, আরাফ নিহাকে চমকে দেয়ার জন্য পিছন দিয়ে গিয়ে হঠাৎ নিহার সামনে ফুল গুলো ধরলো।
তবে নিহা আজ চমকালো না।
আজ নিহাকে কেমন যেনো অন্যরকম লাগছে। আরাফ আগের নিহা আর এখনকার নিহাকে মিলাতে পারছে না।
নিহাঃ" তোমাকে কিছু জরুরী কথা বলার ছিলো"
আরাফঃ" কি কথা?"
নিহাঃ"আমাকে ভুলে যাও"
আরাফঃ " কেনো?"
নিহাঃ"আমি তোমাকে ভালবাসতে পারবো না।"
আরাফঃ" কিন্তু কেনো?"
নিহাঃ" আমার বাবা- মা অন্য যায়গায় আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। ছেলে আমেরিকার এক বড় কোম্পানিতে চাকুরী করে।
আমি আমার বাবা-মার মতের বিরুদ্ধে যেতে পারবো না। আর ছেলেটা আমার জন্য একদম যোগ্য পাত্র।"
আরাফঃ" আমি কি তোমার অযোগ্য? তোমার ভালোবাসা পাওয়ার কোন আধিকার কি আমার নেই। "
নিহা রেগে গিয়ে বললোঃ" কি আছে তোমার? ওর মতো ভালো চাকুরী আছে? তুমি তো এখনো বেকার।"
আরাফঃ" আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো। একটা চাকুরী ঠিকই খুঁজে নিবো।"
নিহাঃ" এই কথা তো কতো আগে থেকেই শুনে আসছি।"
আরাফঃ" আমাকে আর কয়েকটা দিন সময় দাও।"
নিহাঃ" তোমাকে অনেক সময় দেয়া হয়েছে। আর না।"
আরাফঃ" প্লিজ, এমন করো না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।"
নিহাঃ" থাকার অভ্যাস করে নাও।"
আরাফ নিহাকে অনেক অনুরোধ করলো। তবে নিহা তার কোন অনুরোধই শুনলো না।
নিহা চলে যাওয়ার পর আরাফ কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
হঠাৎ, করে বৃষ্টি নামলো। আরাফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।
আরাফের চোখ দিয়েও বৃষ্টি ঝড়ছে। তবে বৃষ্টির কারনে তা দেখা যাচ্ছে না।
দিনটা ছিলো ২ সেপ্টেম্বর।
সেদিন আরাফ বাড়িতে ফেরার পর তার বাবা-মা দেখলো আরাফ কেমন যেনো চুপচাপ হয়ে গেছে। কারো সাথে কথা বলছে না। কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। তার বাবা-মা প্রথম দিন বিষয়টি বুঝতে পারে নি।
তবে দিন যতো যাচ্ছে সমস্যা ততো বেড়েই চলেছে। আরাফ সারাদিন দরজা বন্ধ করে বারান্দায় বসে থাকে। কারো সাথে কথা বলে না। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাকে কিছু বললে ও উত্তর দেয় না।
এভাবে এক মাস যাওয়ার পর তার বাবা-মা তাকে একজন মানুষিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন।
ডাক্তার তাকে কয়েক দিন পর্যবেক্ষন করার পর বললেনঃ" আরাফের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। প্রচন্ড মানুষিক ধাক্কার কারনে তার এমন হয়েছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। না হয় আরাফের মানসিক অবস্থা আরো খারাপের দিকে চলে যাবে।"
আরাফের বাবা-মা চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। দুই বছর ধরে চিকিৎসা চললো।
ডাক্তাররা তাকে এই অবস্থা থেকে কিছুটা বের করতে পারলে ও পুরোপুরি বের করতে পারেন নি।
এরপর থেকে প্রতি বছর ২ সেপ্টেম্বর সে ভালোবাসা দিবস পালন করে। সকলের জন্য ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস হলেও আরাফের জন্য ২ সেপ্টেম্বর ভালোবাসা দিবস।
কারন, এই দিন সে তার ভালোবাসাকে হারিয়েছে। তাই সে প্রতিবছর এই দিনে ভালোবাসা দিবস পালন করে।
প্রতিবছর এই দিনে যেই যায়গাটায় নিহা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো সে যায়গাটাকে আরাফ ফুল দিয়ে সাজায়।
তাছাড়া, এই দিন সে নতুন পাঞ্জাবি পড়ে, হাতে কয়েকটা গোলাপ ফুল নিয়ে আসে।
এরপর সে নিজে নিজে কিছুক্ষন কথা বলে। কিন্তু তার মনে হয় সে নিহার সাথে কথা বলছে।
সে নিহাকে দেখে কিন্তু অন্যকেউ দেখে না।
এরপর, সন্ধ্যা হলে আরাফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিহার চলে যাওয়া দেখে। তখন তার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু ঝড়ে। এরপর সে চলে যায়।
লেখকঃ জোহেব।