শনিবার, ১২ জুলাই, ২০১৪

কল্পনায় ছুঁতে চাওয়া



                                            



কল্পনায় ছুঁতে চাওয়া
--------------------------------------------

ফেসবুকে মেসেজ চেক করতে গিয়ে সাব্বিরের চোখ আটকে গেলো একটি মেসেজ এর দিকে একটি অপরিচিত মেয়ের আইডি আইডি থেকে মেসেজটি পাঠানো হয়েছেম্যাসেজটিতে লিখাঃ"সাব্বির, আমি নিয়মিত আপনার লেখা গল্প গুলো পড়িআপনার গল্প গুলো আমার খুব ভালো লাগেআমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি?"
সাব্বির মাঝে মাঝে ফেসবুকে গল্প লিখেতার গল্প গুলো অনেক পেইজেই প্রকাশিত হয়
সাব্বিরের আইডিতে প্রতিদিন এমন অনেক মেসেজ ও অনেক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে তবে সে সব গুলো মেসেজ দেখে নাতবে আজ কেন যেনো এই মেসেজটা পড়লো
সাব্বির সাধারণত অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট Accept করে নাতবে আজ সে কি মনে করে যেনো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা Accept করলোএরপর সে মেয়েটির আইডিটিতে ঢুকলোমেয়েটির নাম নীলাতার আইডিতে ঢুকে তো সাব্বিরের চোখ আটকে গেলোসাব্বিরের লিখা প্রতিটি গল্পই নীলার Timeline Share করা
সাব্বির মনে মনে বললো, যাক! কেউ তো আমার লেখা গুলোর গুরুত্ব দেয়
এরপর সে ফেসবুক থেকে লগ আউট হয়ে গেলো

অন্যদিকে, নীলা ফেসবুকে ঢুকে দেখে সাব্বির তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট Accept করেছে
বিভিন্ন পেইজ গুলোতে সাব্বিরের লিখা গল্প গুলো পড়ে নীলা এক প্রকার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলো সাব্বিরের
তাই নীলা এখন অপেক্ষা করছে কখন সাব্বির অনলাইন এ আসবে আর কখন সে কথা বলবেনীলা অপেক্ষায় থাকে
কিন্তু সাব্বির একটি কাজে আটকা পড়ে যাওয়ার কারনে ফেসবুকে কয়েক দিন আসতে পারে নি
এ কয়েকদিন নীলা ফেসবুকে অপেক্ষা করতো, কখন সাব্বির অনলাইনে আসবেসারাদিন, সে সাব্বিরের আইডিতে ঘুরতোতার লেখা গুলো বারবার পড়তো

কয়েকদিন পরে সাব্বির বিকেলে অনলাইনে এলোতখন নীলা ও অনলাইনে আছে
নীলা সাব্বিরকে মেসেজ দিলোঃ" কবি সাহেব কেমন আছেন?"
মেসেজটি দেখে সাব্বির অবাক হয়ে গেলোএমন অদ্ভুত মেসেজ কেউ পাঠায়?
যাক অন্তত তার একজন ভক্ততো পাওয়া গেলো
এরপর থেকে প্রতিদিনই তাদের মাঝে নিয়মিত কথা হয়তারা দু'জনে কিছুদিনের মধ্যেই খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলোএভাবেই চলতে লাগলো

একদিন সাব্বির নীলার সাথে দেখা করতে চাইলোনীলাও রাজি হয়ে গেলোদীর্ঘ ৬ মাস ধরে তারা নিয়মিত চ্যাট করছে ও ফোনে কথা বলছেযার ফলে সাব্বির নীলার প্রতি এক রকম দুর্বলতা অনুভব করতে লাগলোসে বুঝতে পারলো সে নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছেতাই, সে ঠিক করলো যে দিন নীলার সাথে দেখা করবে, সে দিনই সে নীলাকে তার ভালোবাসার কথাটা জানাবে

সে দিন বিকেলে সাব্বির নীলার জন্য লেকের পাড়ে অপেক্ষা করছিলোহঠাৎ, পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলোঃ" কেমন আছেন কবি সাহেব ?"
সে পেছন ফিরে দেখলো নীলা তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেতাকে আজ আপ্সরীর মতো লাগছেযেন সৃষ্টিকর্তার তৈরি একটি সৌন্দর্য তার সামনেতার শুধু ইচ্ছে করছে দু'চোখ ভরে দেখতেসে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে
হঠাৎ, নীলা বলে উঠলোঃ" কি হলো কবি সাহেব কোথায় হারিয়ে গেলেন?"
সাব্বির নিজেকে সামলে নিয়ে বললোঃ" কেমন আছো?"
নীলাঃ" ভালোআপনি?"
সাব্বিরঃ" আমি ও ভালো আছি।"
নীলাঃ" হুমতা কবি সাহেবকে আজকে অন্যরকম লাগছে কেনো?"
সাব্বিরঃ" না এমনি।"
নীলাঃ" তা কোন কবিতা-টবিতা লিখছেন নাকি?"
সাব্বিরঃ" আজ সকালে একটা লিখলাম।"
নীলাঃ" ফেসবুকে দিয়েছেন ?"
সাব্বিরঃ" নাতবে কবিতাটা শুধু তোমার জন্য তাই তোমাকে ফেসবুকে কবিতাটা মেসেজ করেছি।"
ব্যাগ থেকে নীলা মোবাইলটা বের করে ফেসবুকে লগইন করতে গেলোকিন্তু সাব্বির তাকে বাধা দিয়ে বললোঃ" এখন নারাত ১২টার দিকে কবিতাটা পড়ো।"
নীলাঃ" ঠিক আছে।"

এরপর নীলা অপেক্ষা করতে লাগলো কখন রাত ১২টা বাজবে আর কখন সে মেসেজটা পড়বে
অন্যদিকে, সাব্বিরকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছেকারন, সাব্বির তার মনের কথা গুলো কবিতার মাধ্যমে নীলার কাছে প্রকাশ করেছেএখন নীলার উত্তর কি হবে? নীলা কি আমাকে ভালোবাসে? আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যাবে না তো? আরো অনেক প্রশ্নই তার মনে উঁকি দিতে লাগলো

রাত ১২টা বেজে গেছেসাব্বিরের কাছে মনে হচ্ছে তার হৃদস্পন্দন সে নিজেই শুনতে পাচ্ছেভয়ে ভয়ে সাব্বির ফেসবুকে লগইন করলোদেখলো একটা মেসেজ এসেছেভয়ে ভয়ে মেসেজটা খুললো
মেসেজটা পড়ে সে বুঝতে পারলো নীলাও তাকে ভালোবাসেযাক বাঁচা গেলোএতক্ষনে সাব্বির একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো

নীলা ছিলো সাব্বিরের জীবনের প্রথম ভালোবাসাআর সাব্বিরও ছিলো নীলার জীবনের প্রথম ভালোবাসাতারা দু'জন দু'জনকে অনেক ভালোবাসতো
নীলার প্রিয় ছিলো লাল গোলাপতাই, সাব্বির যখন নীলার সাথে দেখা করতো তখন তার জন্য একটি করে লাল গোলাপ নিয়ে যেতোআর সাথে থাকতো সাব্বিরের লিখা কবিতাএভাবেই চলতে থাকে
----
কিছুদিন পর নীলার বাবা ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়লোতাই, নীলার বড় ভাই সিদ্ধান্ত নিলো তার বাবার চিকিৎসা হবে আমেরিকায়তাই, তার পুরো পরিবারের আমেরিকা যাওয়া ঠিক হলোতবে নীলার সাব্বিরকে ছেড়ে যেতে মন চাইছে নাতবে তাকে তার বাবার চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যেতে হবে......
---
সকাল থেকেই সাব্বিরের মন খারাপকারন, আজ নীলা আমেরিকা যাচ্ছেযে নীলাকে ছেড়ে সে একদিনও থাকতে পারে না তাকে ছেড়ে সে এতো দিন থাবে কি করে
সাব্বির রেডি হয়ে রওনা দিলো এয়ারপোর্টের দিকেনীলাতো আর চিরদিনের জন্য আমেরিকা চলে যাচ্ছে নাতবুও সাব্বিরের মনে কেমন যেনো একটা ভয় হচ্ছেনীলাকে হারাবার ভয়
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সাব্বির পৌছে গেলো এয়ারপোর্টের সামনেট্যাক্সি থেকে নেমেই দেখলো নীলা এয়ারপোর্টের সামনে অপেক্ষা করছে
নীলার সামনে গিয়ে সাব্বির দাঁড়ালোদু'জন দু'জনের দিকে তাকিয়ে আছেতবে কেউই কিছু বলছে না
নীলার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে
হঠাৎ, সাব্বির বলে উঠলোঃ" চলে যাচ্ছো?"
নীলাঃ" কোথায় চলে যাচ্ছি? এইতো কিছুদিন পরই ফিরে আসবো।"
সাব্বিরঃ" তা হলে কাঁদছো যে?"
নীলাঃ" না এমনিইতুমি ও তো কাঁদছো।"
সাব্বির দেখলো মনের অজান্তে তার চোখ দিয়েও অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে
অশ্রু মুছতে মুছতে সাব্বির বললোঃ" কবে ফিরবে?"
নীলাঃ" ঠিক বলতে পারবো নাবাবা সুস্থ হলেই ফিরে আসবো।"
হঠাৎ, নীলার ভাই নীলাকে ডাকছে
নীলাঃ" আমার এখন যেতে হবেভালো থেকো

সাব্বির কিছু বললো নাদাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে নীলার চলে যাওয়া দেখলো
-------
নীলার বাবাকে আমেরিকার বড় এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হলোডাক্তার নানা পরীক্ষা করার পর বললোঃ" ওনার হাতে সময় খুব কম।"
সবাই যখন কান্নাকাটি করছে নীলার বাবা তখন নীলাকে ডাকলেন
নীলার বাবাঃ" মা রেডাক্তার বললো আমার হাতে আর বেশি দিন সময় নেই।"
নীলা কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ" এমন কথা মুখেও আনবে নাতোমার কিছু হবে না বাবা।"
নীলার বাবাঃ" আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো মৃত্যুর আগে তোর বিয়েটা দেখে যাবোতা আর হয়তো হবে নারে।"
নীলাঃ" না বাবা এমন কথা বলো না।"
নীলার বাবার ইচ্ছা তার বন্ধু সুজন সাহেবের ছেলে সায়মনের সাথে নীলার বিয়ে দিবে
নীলা আর তার বাবার শেষ ইচ্ছেটাকে ফিরিয়ে দিতে পারলো নাসে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো
-----
রীতি মতো আমেরিকাতেই সায়মনের সাথে নীলার বিয়ে সম্পন্ন হয়বিয়ের পরও নীলার প্রতিদিনই সাব্বিরের কথা মনে পড়েসে তার অতীতকে ভুলে বর্তমানকে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে
তবে, জীবনের প্রথম ভালোবাসাকে কি কেউ ভুলতে পারে

অন্যদিকে, নীলার এক বন্ধু সাব্বিরকে নীলার বিয়ের কথা জানায়, তবে সাব্বির তা বিশ্বাস করতে চায় নাসে ফেসবুকে নীলার জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু নীলার আইডিটা De-active
এক সময়ে সাব্বির এ সত্যটাকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করে তবে মাঝে মাঝে তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না যে, তার নীলা এখন আর তার নেই তার নীলা এখন অন্য কারো হয়ে গেছেসে ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে
সে প্রতিদিন প্রতিটি যায়গার বারবার নীলাকে খুঁজেহাজারো মানুষের মাঝে সে নীলাকে খুঁজে বেড়ায়

৫ বছর পর..............
নীলা তার স্বামীর সাথে বাংলাদেশে এসেছেএখন সে ভালোই আছেএখন আর তার পুরোনো কথা গুলো মনে পরে নাস্মৃতি গুলো সব ঝাপসা হয়ে গেছে
অন্যদিকে, সাব্বির এখনো পাগলের মতো তার নীলাকে সব যায়গায় খোঁজেসে এখনো বিশ্বাস করে তার নীলা একদিন ফিরবে

একদিন নীলা তার স্বামীর সাথে গাড়িতে করে এক যায়গায় যাচ্ছিলোতাদের সে দিন খুব তাড়া ছিলো
তাছাড়া ও সে দিন রাস্তাটা মোটামুটি ফাঁকাতাই, ড্রাইভার দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে লাগলো
হঠাৎ, তাদের গাড়ির সামনে একটি লোক পড়লোদ্রুত গতিতে থাকার কারনে ড্রাইভার ঠিক সময় মতো ব্রেক ধরতে পারে নিযার ফলে সেখনেই লোকটির এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো
ততক্ষনে সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়ে গিয়েছেনীলার স্বামী সায়মন সামনে গিয়ে দেখে আসলো
নীলা বললোঃ" কি হয়েছে?"
সায়মনঃ" আরে একটা পাগলের মতো লোক, বড় বড় চুল-দাড়িসে আমাদের গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করেছে।"
নীলাঃ" কই দেখি।"
নীলা ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখতে পেলো যে লোকটির এক্সিডেন্ট হয়েছে সে হচ্ছে তার পুরোনো ভালোবাসা সাব্বির
কেউ সাব্বিরকে চিনুক আর না চিনুক নীলা ঠিকই তার সাব্বিরকে চিনতে পেরেছে
সাব্বিরের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়ছেঅন্যদিকে, নীলা কাঁদতে কাদঁতে বললোঃ" সাব্বির! চোখ খোলো, দেখো আমি ফিরে এসেছিতোমার নীলা ফিরে এসেছে
সাব্বির কিছুক্ষনের জন্য চোখ খুললোসত্যিই তার বিশ্বাসই ঠিক ছিলো, তার নীলা তার কাছে ফিরে এসেছেতবে সাব্বিরের কাছে ধীরে ধীরে সব ঝাপসা হয়ে আসছেতার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে
নীলা বলছেঃ" চোখ খোলো সাব্বির! দেখো তোমার নীলা ফিরে এসেছে"
তবে নীলার কবি সাহেব যে আর কখনোই চোখ খুলবে নাসে যে না ফেরার দেশে চলে গেছে

লেখকঃ জোহেব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন