শনিবার, ১৪ জুন, ২০১৪

লাভার পয়েন্ট





সকালে সাকিবের ঘুম ভাঙ্গলো চেচামেচিতেঘুম থেকে উঠেই সাকিব বললোঃ"ওহবাইরে এতো চেচামেচি কিসের ?"
সাকিবের চাচাতো ভাই রফিক এসে বললোঃ" একি সাকিব চাই? তুমি এখনো রেডিই হওনি।"
সাকিবঃ "কেনো কোথায় যাচ্ছি?"
রফিকঃ" তুমি ভুলে গেলে আমরা তো আজ বান্দর বান যাচ্ছি।"
সাকিবঃ" হুমবাবা-মা কি রেডি হয়েছে?"
রফিকঃ" হুমওনারা রেডিমাল পত্র সব গোছানো শেষতুমি ও রেডি হয়ে নাও।"
সাকিবঃ"ঠিক আছে তুমি যাওআমি আসছি।"
সাকিব তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলোনিচে নেমে দেখলো সব গোছানো শেষ
সাকিব রফিককে জিজ্ঞেস করলোঃ" আমরা কয়টায় রওনা দিবো?"
রফিক বললোঃ"এইতো ১০টার দিকে।"

সাকিব অপেক্ষা করতে লাগলোবন্ধুদের কাছে শুনেছেবান্দর বান খুব সুন্দর যায়গাতবে কোন দিন যাওয়া হয় নিসে আজ খুব খুশিকারন, তার বাবা বান্দর বান জেলায় বদলি হওয়ার কারনে সে এমন একটি যায়গায় থাকার সুযোগ পাচ্ছে
একটু পর সাকিবের বাবা সাকিবকে গাড়িতে উঠার জন্য বললেনসাকিব গাড়িতে বসে মোবাইলে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলোশুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো মনে নেই
যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছেসে রফিককে জিজ্ঞেস করলোঃ"রফিক, আমরা এখন কোথায় আছি?"
রফিকঃ" আমরা তো এখন বান্দর বানে।"
রফিকের কথা শুনে তাড়াতাড়ি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দেখলো সাকিবএতো সুন্দর যায়গা সে এর আগে কোথাও দেখে নি
সাকিব বললোঃ" আচ্ছা, রফিক আমরা এখন কোন যায়গায় যাচ্ছি?"
রফিকঃ" নীল গিরির কাছে একটা সরকারি বাংলো আছেআমরা সেখানে যাচ্ছি।"
সাকিব গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেএমন সময় রফিক বললোঃ"সাকিব ভাই নামুনআমরা চলে এসেছি।"

রাতের খাবার শেষে সাকিব বললোঃ" ভালো লাগছে নাআচ্ছা, রফিক এখানে আসে পাশে কোন সুন্দর পাহাড় আছে।"
রফিকঃ" হ্যাআছে তো।"
সাকিবঃ" ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছে নাচলো পাহাড়টা ঘুরে আসি।"
রফিকঃ"এতো রাতে?"
সাকিবঃ" এতো রাতে কোথায় ? সবে তো মাত্র ৮.৩০ বাজে।"
রফিকঃ"ঠিক আছেচলো।"
রফিক টর্চ লাইট নিয়ে সাকিবের পেছন পেছন এলো
সাকিব বললোঃ"রফিক টর্চের কি দরকার ছিলো? আজ তো জোছনা সব তো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।"
রফিকঃ"তা তো দেখছিইতবু ও রাতে চলতে গেলে সাথে টর্চ রাখা প্রয়োজন।"
সাকিবঃ" তা তুমি ঠিক বলেছো।"
রফিকঃ" আচ্ছা সাকিব ভাই আজ কি তুমি বাঁশি বাজাবে।"
সাকিবঃ"হ্যাএই জন্যই তো সাথে করে বাঁশিটা আনলাম।"
কথা বলতে বলতে তারা পাহাড়ের উপর উঠলোজোছনার আলোয় সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছেরফিক এক পাশে বসে সিগারেট ধরাচ্ছেঅন্যদিকে, সাকিব আপন মনে বাঁশি বাজাচ্ছেএতো রাতে এই পাহাড়ের কাছে কোন মানুষ থাকে না
সাকিবের বাঁশির আওয়াজ এক প্রকার প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করছে
এভাবে সে প্রতিদিন ই বাঁশি বাজায়একেক দিন বাঁশির সুর একেক রকম শোনা যায়

অন্যদিকে, তার বাঁশির সুরে ও যে কারো মন টানে এটা সাকিব জানতো না
নীলাদের বাড়ি থেকে সাকিব যে পাহাড়টিতে বসে বাঁশি বাজাতো সে পাহাড়টি স্পষ্ট দেখা যায়
সে পাহাড়টি থেকেই প্রতিরাতে ভেসে আসে বাঁশির সুরনীলা মাঝে মাঝে ভাবে এতো সুন্দর করে কেউ কিভাবে বাঁশি বাজায়?
প্রতিদিন এ বাঁশির শব্দ শোনার জন্য নীলার মন আনচান করে
সে তার জানালার পাশের টেবিলে বসে অপেক্ষা করে সেই বাঁশির সুর সোনার জন্য
একদিন সে ভাবলো যে, কে এতো সুন্দর করে বাঁশি বাজায়তাকে একবার দেখতে হবে তাই, এক জোছনা রাতে যখন সাকিব বাঁশি বাজাচ্ছিলো তখন নীলা সেই পাহাড়ের কাছে গেলোসে যতই কাছে যাচ্ছে বাঁশির সুর ততই স্পষ্ট সোনা যাচ্ছে
সে সাকিবের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ" কে আপনি?"
সাকিব হঠাৎ কথা শুনে চমকে উঠলোসে পেছনে ফিরে দেখলো একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছেনিজেকে সামলে নিয়ে বললোঃ" আমি সাকিবসামনের বাংলোতে থাকিএখানে নতুন এসেছি।"
নীলাঃ" আপনি কি প্রতিদিনই এখানে বাঁশি বাজান?"
সাকিবঃ" হ্যা।"
নীলাঃ" আপনি আসলেই খুব সুন্দর বাঁশি বাজান।"
সাকিবঃ" ধন্যবাদ।"
নীলাঃ" আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি?"
সাকিবঃ" অবশ্যই।"

এভাবেই সাকিব ও নীলার বন্ধুত্ব শুরু হয়মাঝে মাঝে সাকিব এ পাহাড়ে বসে বাঁশি বাজায়আর নীলা তার পাশে বসে মুগ্ধ হয়ে সেই বাঁশির আওয়াজ শুনেসময় যে কিভাবে পার হয়ে যেতো তা তারা দু'জনেই বুঝতে পারতো না
ধীরে ধীরে সাকিব ও নীলা দু'জনের মাঝেই এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো
তাদের এ ভালোলাগা একদিন ভালোবাসায় পরিণত হলো

এক বিকেলে সাকিব দেখলো তার মোবাইলে নীলা ফোন দিয়েছেফোন ধরার পর নীলা বললোঃ" সাকিব, তুমি কি একটু পাহাড়ে আসতে পারবে?"
সাকিবঃ" হ্যা পারবোকিন্তু কেনো?"
নীলাঃ" তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে।"
সাকিবঃ" কি কথা?"
নীলাঃ" আগে তুমি আসোতারপর বলছি।"
সাকিব সে পাহাড়ে গেলোগিয়ে দেখলো নীলা দাঁড়িয়ে আছেনীলার সামনে যেতেই সাকিব দেখলো নীলার চোখে পানি
সাকিবঃ" কি হয়েছে তোমার?"
নীলাঃ" বাবা-মা আমার জন্য পাত্র দেখছে।"
সাকিবঃ" তুমি কি তোমার পরিবারের কাছে আমাদের সম্পর্কের কথা জানিয়েছো?"
নীলাঃ" না।"
সাকিবঃ" ঠিক আছে আজকে জানিয়ো।"
নীলাঃ" ঠিক আছে।"
সাকিব ও নীলা দু'জনেই তাদের পরিবারের কাছে জানিয়েছেতবে তাদের কারো পরিবারই রাজি হয় নিকারন, সাকিব মুসলমান আর নীলা হিন্দু
নীলার বাবা-মা তাড়াতাড়ি অন্য যায়গায় নীলার বিয়ে ঠিক করলো

.........................................................

সাকিব সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনতে পেলো দূরে মানুষের চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছেসে রফিক কে জিজ্ঞেস করলোঃ" রফিক পাহাড়ের কাছে এতো চেঁচামেচি কিসের?"
রফিক বললোঃ" আরেশুনলাম কাল রাতে একটি মেয়ে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।"
কথাটা শোনার পর সাকিবের কেমন যেনো লাগছিলোসে দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো
পাহাড়ের কাছে গিয়ে দেখলো মানুষের ভীড়
সে ভীড় ঠেলে গিয়ে দেখলো, কাল যে মেয়েটি পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে আর কেউ নাসে হলো তার প্রিয়তমা
তার প্রিয়তমাকে এ অবস্থায় দেখার পর সাকিব কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো

এরপর অনেক চিকিৎসা করেও সাকিবকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনা গেলো না
সাকিব ও নীলার ভালোবাসার স্মরণে এ পাহাড়টির নাম রাখা হলো "লাভার পয়েন্ট"
এখনো প্রতিদিন দেখা যায় একজন বড় বড় চুল ও দাড়ি ওয়ালা লোক সে পাহাড়টির উপর বসে বাঁশি বাজারসে লোকটি হলো সাকিব
এখনো পাহাড় থেকে ভেসে আসে এক করুন বাঁশির সুর

লেখকঃ জোহেব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন