রবিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

পথ হারা পথিক





পথ হারা পথিক
-------------------------------------

কিছু মানুষ হঠাৎ করে হারিয়ে যায়।সবার মাঝে থেকেও যেনো তারা নেই। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে কোন এক অজানা জগতে।
তাদের জীবনে থাকে না কোন পিছুটান। থাকে না কোন লক্ষ্য। থাকে না কোন চাওয়া-পাওয়া, থাকে না কোন স্বপ্ন।

তাদের জীবনটা হয় শুষ্ক মরুভূমির মতো। পথ হারা পথিকের মতো তারা কি যেনো খুঁজে যায়।
কি যেনো একটা নেই।

মায়াবী চেহারার সেই সরল ছেলেটির মতো।
যার জীবনে এক সময় নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিলো। ছিলো ছোট ছোট কিছু চাওয়া-পাওয়া।
কিছু স্বপ্ন, যা কারো হাত ধরেই পূর্নতা পেতে চেয়েছিলো।
তবে তা বাস্তবে পূর্নতা পাওয়ার আগেই থমকে দাঁড়ালো।

একটু একটু করে গড়ে তোলা অনেক বছরের বিশ্বাস গুলো ভেঙ্গে পড়তে লাগলো তাসের পাতার মতো।
আর সেদিন তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো ছেলেটি। কয়েক মূহুর্তের জন্য নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না।

কয়েক মূহুর্তের ভেতর চেনা মানুষটির বদলে যাওয়া মেনে নিতে পারছিলো না।
কিছু মানুষ যে গিরগিটির মতো রং পাল্টাতে পারে, তা তার জানা ছিলো না।

এক সময় এই চরম সত্যটাকেই মেনে নেয়। তবুও তার মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয় না, যে তার সেই চেনা মানুষটি এতোটা বদলাতে পারে,যাকে সে ভালোবেসেছিলো।

রাতে ঘুম ভাঙ্গলেই সেই পরিচিত নামটি ধরে ডেকে উঠে। পরক্ষনেই মনে হয়, সে মানুষটি এখন তার নেই হয়ে গেছে অন্য কারো।
রাতে ঘুম আসে না। খুঁজে বেড়ায় নিজের দোষ গুলো।

পুরোনো ম্যাসেজ গুলো বার বার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে।
গভীর রাতে কন্ট্রাক্ট লিস্টের সেই পরিচিত নাম্বারটি চোখে পড়লেই মনে হয়, এই নাম্বারটা থেকে কেউ একজনের ফোন আসার কথা ছিলো।
পরক্ষনেই মনে হয়, হয়তো বা আর কখনো আসবে না।
তবুও অপেক্ষা করে।

অপেক্ষা করে সে যায়গাটিতে, যেখানে বসে গভীর আবেগে সেই মানুষটির হাতটি ধরে বলেছিলোঃ "ভালোবাসি।"

কিছু মানুষ খুব সহজেই কাউকে বিশ্বাস করে নেয়। সেই মানুষটির হাতটা ধরে জীবনের বাকিটা পথ চলতে চায়।
তবে, যখন বিশ্বাস গুলো তাসের পাতার মতো ভেঙ্গে পড়তে থাকে, সেই চেনা মানুষটা অচেনা হয়ে যায়,তখন সেই মানুষটা সেই পাথের বাঁকেই দাঁড়িয়ে পড়ে।
খুঁজে বেড়াই সেই মানুষটিকে।
পথ হারা পথিকের মতো তাকিয়ে থাকে সেই পথের পানে।

লেখকঃ জোহেব

শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫

মনে পড়ে




মনে পড়ে
---------------------------------------------------------------------------------------------------------

অনিক বসে আছে জানালার পাশে। আজ আকাশে মেঘের ঘনঘটা। দমকা হাওয়া বইছে। দেখতে দেখতে আকাশ থেকে শুরু হলো বৃষ্টি। মনে পড়ে গেলো কিছু স্মৃতি। মোবাইলটা ঘাটতে গিয়ে চোখে পড়লো ইনবক্সে জমে থাকা চার বছর পুরোনো কিছু ম্যাসেজ।

যখনি সময় পায় পুরোনো ম্যাসেজ গুলো দেখে সে। চারটি বছর পেরিয়ে গেলো। তবুও অনিক ইরাকে ভুলতে পারে নি। তাই, চার বছর পুরোনো ম্যাসেজ গুলোকে এখনো খুব যত্নে বুকে আগলে রাখে ইরার স্মৃতি হিসেবে।
ইরার হয় তো এখন আর অনিকের কথা মনে নেই। অনিকের দেয়া অর্থহীন ম্যাসেজ গুলোও হয় তো তার মোবাইলে এখন আর নেই। না থাকারই কথা। মানুষ কখনো অপ্রয়োজনীয় কিছু নিজের কাছে রাখে না। এ ম্যাসেজ গুলো ইরার কাছে অর্থহীন হলেও অনিকের কাছে তা অনেক কিছু।

এখন আর সে গান গায় না। গিটারটায় ধুলো পড়ে আছে। মাঝে মাঝে জোছনা রাতে বাঁশি বাজায়। বাঁশির সুর আর জোছনা মিলেমিশে একাকার হয়ে অদ্ভুত এক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
কখনো বা কোনো ঝড়ের রাতে ছাঁদ থেকে ভেসে আসে বেহালার এক করুন সুর। টপটপ করে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা চোখের জল।
এখন আর সে কবিতা লিখে না। খালি পড়ে থাকে তার কবিতার খাতাটা।সে এখন আর স্বপ্ন দেখে না। হয় তো স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছে।

আজ তার অনেক ইচ্ছে করছে একবার ইরার সেই কোমল স্বরটা শুনতে। তবে হয় তো তা আর সম্ভব নয়।
সময় বদলে যায়। সময়ের সাথে বদলে যায় কিছু মানুষ। চেনা মানুষ গুলোও তখন কেমন অচেনা হয়ে যায়। তবে কিছু মানুষ কখনোই বদলাতে পারে না। তারা আগের মতোই থেকে যায়। কারন, তাদের সময়টা হয় তো থেমে থাকে। থমকে যায় জীবনের পথের কোন এক বাঁকে। আর হয় না পথ চলা।

লেখকঃ জোহেব

শেষ গান




শেষ গান
-------------------------------------

"কেমন আছো,ইরা?"
অনেক দিন পর সেই পরিচিত কন্ঠস্বর। পেছনে ফিরে তাকায় ইরা।দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মুহিব।
মাত্র ছয় মাস হলো,মুহিবের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। এ ছয় মাসেই কন্ঠটা কেমন যেনো অপরিচিত লাগছে।
চেহারাটাও কেমন যেনো বদলে গেছে।মুহিবের চেহারায় সেই উজ্জল ভাবটা আর নেই।চেহারাটায় কেমন যেনো একটা গাঢ় বিষাদের ছায়া পড়েছে।
তবুও চেহারায় রয়েছে হাসি।হৃদয় ভাঙ্গার হাসি হয় তো একেই বলে।

ইরা শান্তস্বরে জবাব দেয়,"ভালো।"
এরপর তাকিয়ে থাকে নিচের দিকে।

সত্যিই আজ ইরাকে অপূর্ব লাগছে। যেনো কোন সর্গের অপ্সরী পৃথিবীতে নেমে এসেছে।
এতক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধু অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলো মুহিব। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলো।
আর কিছুক্ষন পরই তো অন্য কারো হয়ে যাবে ইরা। শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?
ইরা কিছু একটা বলতে চায়। তবে তার আগেই অন্যদিকে চলে যায় মুহিব।

বিয়ে বাড়িতে তার অনেক কাজ।তার উপর দ্বায়িত্ব পড়েছে অনেক।
বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রেখে হৃদয়ের চাপা কষ্টটা ভুলে থাকায় ব্যার্থ চেষ্টা। আর তো কিছুক্ষন।এরপরই তো তার ইরা এ সময়টা নিজেকে সামলে নিতে পারলেই চলে।

গেটের দিকে পা বাড়ায় মুহিব।
ইরার বাবার সামনা সামনি হয়ে যায় সে,"আরে মুহিব।কোথায় যাচ্ছো? বরযাত্রি তো এসে গেলো।"
মুহিবঃ"শরীরটা ভালো লাগছে না,আঙ্কেল।আমি একটু আসি।"

গেটের বাইরে পা বাড়ায় মুহিব।কিছুটা দূরে চলে আসে।
হয় তো সে ইরার যোগ্য ছিলো না।তাকে পাওয়ার কোন অধিকারই তার নেই।
দীর্ঘ চারটি বছর যাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলো,আজ তাকে অন্য কারো হয়ে যেতে সে কি করে দেখবে?
এতক্ষন সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা কষ্ট গুলো অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়ে।

শেষ বারের মতো ইরাকে ম্যাসেজ দিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে নেয় মুহিব।
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাসের পর হাটতে থাকে কোন এক অজানা গন্তব্যের দিকে।

কিছুদিন পর...
বিয়ের প্রেজেন্টেশনের সব উপহার গুলোই দেখা হয়েছে।শুধু মাত্র মুহিবের দেয়া উপহারের প্যাকেটটিই এখনো খুলে দেখে নি ইরা।রেখে দিয়েছে।
আজ বিকেলে প্যাকেটটি খুললো।প্যাকেট থেকে বেরিয়ে আসে মুহিবের দেয়া নীল রঙের শাড়ি।ইরার প্রিয় রং নীল।
সাথে একটি ছোট্ট প্যাকেট ও রয়েছে ভেতরে।প্যাকেটটা খুলে দেখে ইরা।
ভেতরে রয়েছে ইরার কিছু ভাঙ্গা চুড়ি।যা একদিন মুহিবের সাথে বেড়াতে গিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো।

নিজের পুরোনো নাম্বারটা খোলে ইরা।বিয়ের দিনের পর এ নাম্বারটা বন্ধ রেখেছিলো সে।
নাম্বারটা খুলতেই মোবাইলের স্কিনে ভেসে আসে একটা ম্যাসেজ।
যে গানটা মুহিব প্রায়ই ইরাকে শোনাতো,সেই গানটা।
ভেসে উঠে কিছু লাইনঃ
"শ্যাম বালিকা,তুমি জানো কি?
তোমার জন্য বয়ে যায়,হৃদয়ে শ্রাবণ ধারাটি।"

লেখকঃ জোহেব

একটি চিঠি ও কিছু অব্যাক্ত কথা




একটি চিঠি ও কিছু অব্যাক্ত কথা
-------------------------------

রাজকুমারী,
মনে আছে কি আজকের দিনটির কথা। ১৮ নভেম্বরের শীতের সকালের কথা। এদিন সকাল ৭.১৫ মিনিটে আমরা সারাজীবনের জন্য এক বন্ধনে আবদ্ধ থাকার শপথ করেছিলাম।
বলেছিলাম, কখনো তোমার হাতটা এক মূহুর্তের জন্যও ছাড়বো না।সারা জীবন তোমায় বুকে আগলে রাখবো।

সেদিন তো তুমিও বলেছিলে, কখনো আমার হাতটা এক মূহুর্তের জন্যও ছাড়বে না।
তবে জানো কি, সময়ের স্রোতে হয় তো মানুষ গুলোও বদলে যায়। চেনা মানুষ গুলোও কেমন যেনো অচেনা হয়ে যায়। ভূলে যায় তাদের দেয়া ওয়াদা গুলো। হয় তো আজ তুমিও ভুলে গেছো।
তুমিও হয় তো অনেক বদলে গেছো।

জানো,তোমার দেখানো স্বপ্ন গুলো এখনো আমার চোখে ভাসে।
ইচ্ছে ছিলো তোমায় নিয়ে একটা ছোট্ট ঘর বানাবো।
যে ঘরের দরজাটা হবে বিশ্বাসের, জানালাটা হবে আদরের, ছাদটা হবে ভালোবাসার। আর পুরো ঘর জুড়ে থাকবে শুধু ভালোবাসা।

তোমায় নিয়ে স্বপ্ন বুনতাম, তোমায় নিয়ে কোন এক গধুলী বিকেলে নদীর পাড়ে তোমার হাতটা শক্ত করে ধরে বহুদূর হেটে যাবো।
কোন এক জোছনা রাতে বারান্দায় তোমায় নিয়ে জোছনা দেখবো।
কোন এক শিশির ভেজা সকালে তোমার চোখে স্বপ্ন বুনবো।
দু'জন দু'জনকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোবেসে যাবো।

তবে কি জানো?স্বপ্ন তো স্বপ্নই। তা যে কখনো বাস্তবে রুপান্তরিত হওয়ার নয়।
তবুও প্রায়ই আমি তোমার দেখানো স্বপ্ন গুলো দেখি। তবে যখন ঘুম ভাঙ্গে, তখন আমার স্বপ্ন গুলোও চলে যায়। ঝড়া বকুলের মতো শুধু যার স্মৃতিটাই পড়ে থাকে।
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।বুকের বাম পাশের সেই চিনচিনে ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে।

জানো,এখনো যখন চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। রাত নিঝুম হয়। তখন তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। স্মৃতির পাতা হাতরে বেড়াই। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখি তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত।

এখনো প্রতিদিন সকালে মনে হয়। কেউ একজনের ফোন আসবে। মায়া ভরা কন্ঠে বলবে,"শুভ সকাল।"
তবে পরক্ষনেই মনে হয় সেই চিরচেনা নাম্বারটা থেকে আর কখনোই ফোন আসবে না।
কোন এক রাতে কেউ ফোন দিয়ে ফিসফিস করে বলবে না, "ভালোবাসি।"

জানো,এখনো মাঝে মাঝে আমার বিশ্বাস হয় না, আমার সেই রাজকুমারীটা এতোটা বদলে গেছে।
আমার রাজকুমারীটা তো এমন ছিলো না। তবে কেনো এতোটা বদলে গেলো?- নিজেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে বেড়াই।

পরক্ষনেই ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠে, একদিন একটা ঝড় এসেছিলো। সেই ঝড়টা আমার কাছ থেকে আমার রাজকুমারীটাকে কেড়ে নিয়ে গেলো। বদলে গেলো আমার রাজকুমারীটা।
এতোটাই বদলে গেলো যে, আমি তখন আমার আগের রাজকুমারীটা আর এই রাজকুমারীটাকে মিলাতে পারছিলাম না।
জানো,মাঝে মাঝে মনে হয়, তুমি কি আমার সেই রাজকুমারীটা?

হয় তো আমার ভুলে গিয়েছো। হয় তো আমায় ছাড়া তুমি ভালোই আছো। তবুও দূর থেকে তোমার ভালোই চাইবো।

না হয় স্মৃতির পাতায় ক্ষনিকের জন্য উড়ে আসা একটা রঙিন প্রজাপতি হয়েই রইলে।
যে প্রজাপতিটাকে নিয়ে জীবনের বাকিটা পথ চলতে চেয়েছিলাম।
তবে সে মাঝ পথেই উড়ে গেলো, হারিয়ে গেলো কোন এক দিগন্তে। আর আমি পথিক সে পথের ধারেই দাঁড়িয়ে রইলাম।

জানি, হয় তো কখনোই এই চিঠি গুলো তোমায় কাছে পৌছবে না। তবুও লিখে যাই।
ভালো থেকো রাজকুমারী। অনেক ভালো থেকো।

ইতি,
.............

লেখকঃ জোহেব

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

অবহেলা (৭ম পর্ব)






অবহেলা (৭ম পর্ব)

চারি দিকে ফুটে উঠেছে ভোরের আলো। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো মিলির। কাল রাতে জোছনা দেখতে দেখতে কখন যে বারন্দার ইজি চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই।
আজ কেনো যেনো তার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে সব না বলা কথা গুলো অভ্রকে বলে দিতে। তবে সে তো আর অভ্র নয় যে হাঁটতে হাঁটতে কবিতা লিখে ফেলবে। কিছুক্ষন বসে বসে কল্পনার জগতে পদচারন করে মিলি। খুঁজতে থাকে ছন্দ।
তবে সব গুলো কথা ছন্দে মিলছে না। ঘর থেকে খাতা এনে লিখলো ৮ লাইনের একটি কবিতা।

আজ অভ্রকে কবিতাটা পাঠাবে সে। মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে লিখে ফেললো। কয়েকবার পাঠাতে গিয়েও পাঠাতে পারে নি। কেমন যেনো একটা ভয় কাজ করছে তার মাঝে। অভ্রকে হারানোর ভয়। কিছুক্ষন পর ম্যাসেজটা পাঠিয়েই দিলো। অপেক্ষা করতে থাকলো ম্যাসেজ এ উত্তর এর। তবে উত্তর এলো না।


বিকেলেঃ
________________

অভ্র বসে আছে লেকের পাড়ে। আজ তার হাতে কবিতার ডায়েরী নেই। বিকেলের সোনালী আলো গড়িয়ে পড়ছে লেকের পানিতে। সে পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছে অভ্র।

“কেমন আছো অভ্র?”
অভ্র ফিরে তাকালো। মিলি দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্রঃ“ভালো। বসো...”
মিলিঃ“ম্যাসেজটা পেয়েছো?”
অভ্রঃ“হুম। দেখেছি।”
মিলিঃ“তো...”
অভ্রঃ“মিলি। একটা কথা বলবো?”
মিলিঃ“বলো...”
অভ্রঃ“দেখো মিলি। একে ভালোবাসা বলে না। একে বলে মোহ। এখন তুমি মোহের ঘোরে বলছো ভালোবাসি। তবে যখন মোহ কেটে যাবে, তখন আর ভালোবাসাটা থাকবে না।”
মিলিঃ“আমি তো মোহের ঘোরে বলছি না।”
অভ্রঃ“তা সবার মতে তো আমি একজন বিরক্তিকর মানুষ। তা আমাকে তোমার ভালো লাগলো কি ভাবে?”
মিলিঃ“তুমি মোটেও বিরক্তিকর নও। তুমি এমন একজন মানুষ যে সবার থেকে আলাদা। সবাই এক পথে চলে। তবে তোমার পথ ভিন্ন। তোমার নিজের পথটা সবার চেয়ে আলাদা।”
অভ্রঃ“হতে পারে। তবে এ পথে তুমি যে আমার সাথী হতে চাচ্ছো, তা কি বোকামি নয়?”
মিলিঃ“মোটেও বোকামি নয়।”
অভ্রঃ“নিজের ভালোবাসাটা কে এভাবে অপাত্রে দান করো না।”
মিলিঃ“যে এতো সুন্দর করে লিখতে পারে, সে কখনো অপাত্র হতে পারে না। যার মাঝে একটা কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ হৃদয় ও শিল্পি মন আছে সে কখনো অপাত্র হতে পারে না।”
অভ্রঃ“মিলি! তুমি ভুল করছো। আমি হলাম তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়ের কবির মতো। কোন এক গল্পের চরিত্র। এখন তুমি মোহের ঘোরে এসব বলছো। যখন মোহ কেটে যাবে, তখন আর এই ভালোবাসাটা থাকবে না।”
অভ্র হেঁটে চলে যায়। মিলিও আর কিছু বলে না। বসে বসে তার চলে যাওয়া দেখে।


To be continued..................

[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]


লেখকঃ জোহেব।


শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ইতিহাসের পাতায় এক ফোঁটা অশ্রু







ইতিহাসের পাতায় এক ফোঁটা অশ্রু
-----------------------------------------------------------------------------
বাদশাহ আকবর বসে আছেন আসনেবছরের প্রথম দিনরাজ্য জুড়ে বয়ে চলেছে আনন্দের বন্যাসরাবের নেশায় প্রাসাদের সবাই মোহগ্রস্থ
জলসা ঘরে হঠাৎ করে ধোঁয়াশোনা যাচ্ছে নুপুরের ধ্বনিযা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেধোঁয়া যতই কমছে ততই সকলের সামনে সব দৃশ্যমান হচ্ছেকেউ এক জন দাঁড়িয়ে আছে মাথায় ঘোমটা দিয়েহঠাৎ তার মুখ থেকে গানের সুর শোনা গেলো
বড়ই মধুর সুরসকলে তাকিয়ে আছে সামনে আর মুগ্ধ হয়ে শুনছে সেই গানের সুর যা হৃদয় কেড়ে নেয়
আনার কলির মাথা থেকে ঘোমটা উঠে গেলোশুরু হল নাচের ধুন
আনার কলির ঘোমটা গিয়ে পড়লো শাহজাদা সেলিমের কাছেশাহজাদা মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে আনার কলিকেএ যেনো কোন সর্গের অপ্সরীযার সুরেলা কন্ঠ আর মোহনীয় সৌন্দর্য কেড়ে নিলো শাহজাদার হৃদয়যার সৌন্দর্য দেখলে শুধু মন চায় চেয়ে থাকতেযাকে চাঁদের উপমা দিলেও কম হয়
সেদিন শাহজাদা সেলিমের পলক নড়লো নাসে যে মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েছে
শাহজাদা মনে মনে আনারকলি কে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চাইলোতবে আনারকলির হেরেমে শুধু সম্রাট আকবর ঢুকতে পারতেনসেখানে অন্য কারো ঢুকা ছিলো নিষেধ
তবে শাহজাদাকে যে আনারকলির সাথে দেখা করতেই হবেতাই, সেলিম হেরেমের পাহাড়াদারদের ঘুষ দিয়ে আনারকলির সঙ্গে দেখা করলো
আনারকলির ও শাহজাদাকে ভালো লাগলোতবে তাদের দুজনকে যে কেউ মেনে নেবে না যেনেও তারা লুকিয়ে প্রেম করতে লাগলো
তখন আনারকলির বয়স ৪০ এর কাছাকাছিআর সেলিমের বয়স তখন ৩০
তবুও তাদের ভালোবাসার মাঝে বয়স কোন দিন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি
অন্যদিকে, সম্রাট আকবর শাহজাদা সেলিমের ঘনঘন হেরেমে যাওয়া দেখে সব বুঝতে পেরেছিলেন
এক দিন সেলিম হেরেমের পাহাড়াদারকে দিয়ে চিঠির মাধ্যমে আনারকলিকে রাতে নদীর পাশের মন্দিরের কাছে ডাকলআনারকলিও লুকিয়ে শাহজাদার সঙ্গে দেখা করতে গেলো সেখানে
তবে সম্রাট আকবর সবই টের পেয়েছিলেনসেদিন সেলিম ও আনারকলিকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তিনি
শাহজাদার সঙ্গে প্রেমের অপরাধে সেদিন আকবর আনারকলিকে হত্যা করলেন সেলিমের চোখের সামনে
বহুদিন কেটে গেলোতবে সেলিম তার ভালোবাসার মানুষটিকে ভুলতে পারে নিতাই, সে লাহোরে তার ভালোবাসার মানুষটির স্মরণে তৈরি করলো স্মৃতি সৌধ
স্মৃতিসৌধের এক দিকে লেখা আছে আল্লাহর ৯৯টি নাম
অন্যদিকে লেখা আছে দু'লাইন ফরাসি কবিতাঃ
"তা কিয়ামাত শুকর গুইয়াম কারদিগারি কিশ রা
আহ, গার মান বাজ বিনাম রু ইয়ার-ই-খুশ রা।"
যার বঙ্গানুবাদ হয়ঃ
" একবার, আর একবার দেখতে পাই প্রিয়তমার মুখ যদি
ঈশ্বর তোমার নাম ডেকে যাবে হৃদয় কেয়ামত অবধি।"

লেখকঃ জোহেব

সেদিন খুঁজবে আমায়






সে দিন খুঁজবে আমায়
কবিঃ জোহেব

সেদিন তুমি খুঁজবে আমায়,
বসন্তের ফুলে।
সেদিন তুমি খুঁজবে আমায়,
কোন এক বর্ষা সকালে।
সেদিন তুমি খুঁজবে আমায়,
কোন এক বৃষ্টি বিলাসী বিকেলে।
সেদিন তুমি খুঁজবে আমায়,
শরতের কাশ ফুলে।
কখনো বা খুঁজবে আমায়,
কোন এক জোছনা রাতে।

সেদিন তুমি কোথাও আমায়,
পাবে নাকো খুঁজে।
যদি কখনো কাঁদে মন,
খুঁজে নিয়ো আমার,
আকাশের নক্ষত্রদের মাঝে।
সেদিন কাঁদবে তুমি,
তোমার চোখ হতে গড়াবে অশ্রু।
আবারো বেজে উঠবে আমার সেই,
বেহালার করুণ সুর।
কাঁদবে তুমি ব্যাকুল হয়ে,
গড়িয়ে পড়বে অশ্রু,
তোমার কপোল বেয়ে।

তবে আফসোস-
তখন তোমার অশ্রু,
পারবো না মুছতে আমি।
ততদিনে অন্য কোন জগত,
দিচ্ছে আমায় হাতছানি।
যে জগত হতে,
আজো কেউ ফিরতে পারে নি।