রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৪

অবহেলা (৫ম পর্ব)

                                                           


                           অবহেলা (৫ম পর্ব)

৬ মাস পর...

এই ৬ মাসে অভ্র ও মিলি খুব ভালো বন্ধ্য হয়ে গিয়েছে। এখন বেশির বাগ সময়ই তাদের দুজনকে এক সাথে দেখা যায়। বিশেষ করে বিকেলে, যখন অভ্র লেকের পাড়ে বসে কবিতা লিখে, মিলি তখন তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার কবিতা লেখা দেখে মুগ্ধ চোখে।
কখনো বা কোন বৃষ্টি দিনে অভ্রকে দেখা যায় কদম ফুল হাতে মিলির জন্য অপেক্ষা করতে। মিলির কদম ফুল খুব প্রিয়। এ ফুল খোপার দিলে তাকে অপ্সরীর মত লাগে।

মিলির মতে অভ্র এক জন অসাধারণ মানুষ। যদিও অভ্র একজন অতি সাধারণ ছেলে। অতি সাধারণরা ও অসাধারণ হয়। তারা তাদের অতি সাধারণের দিক দিয়েই অসাধারণ।

মিলি যতক্ষন অভ্রর সাথে থাকে ততক্ষণ তার মাঝে এক অন্য রকম অনুভুতি কাজ করে। এ অনুভুতিটার মানে তার জানা নেই।
সে মাঝে মাঝে ভাবে, এ রকম অনুভব হওয়ার কারন কী? এর নামই কি ভালোবাসা?
সে উত্তর খুঁজে পায় না। হয় তো এর নামই ভালোবাসা।

পরে মিলি নিজের কাছেই তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়। এর নামই ভালোবাসা। তবে অভ্র কি তাকে ভালোবাসে?
মিলি ভাবতে থাকে...
অভ্র তো একজন কবি। কবিরা তো আকাশের কান্না শুনে, বৃক্ষের সাথে কথা বলে, পাখিদের গান শোনে। প্রকৃতি তাদেরকে সে প্রখর অনুভব শক্তি দান করেছে।
তা হলে সে কেনো মিলির ভালোবাসাটা অনুভব করতে পারছে না?- মিলি বসে বসে এসব ভাবে।

ঘড়ির কাটায় তখন রাত ১২.৩০। মিলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে কি সুন্দর জোছনা। চার দিকে সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
মিলি এক বার ভাবে অভ্রকে ফোন দিবে। তবে, মোবাইলটা হাতে নেয়ার পরও ফোন দেয় না।

এতো সুন্দর জোছনা রাত। অভ্র নিশ্চয়ই এখন কবিতা লেখা নিয়ে ব্যাস্ত। কারন, এতো সুন্দর জোছনা খুব কমই দেখা যায়। এখন অভ্রকে বিরক্ত করাটা ঠিক হবে না।

মিলি দাঁড়িয়ে থাকে বারান্দায়। জোছনা ধরার চেষ্টা করে। তবে সে চেষ্টা বিফল হয়।


To be continued..................

[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]


লেখকঃ জোহেব।


মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

অবহেলা (৪র্থ পর্ব)



                                            


                                  অবহেলা (৪র্থ পর্ব)

কলেজের পেছনের পুকুর পাড়ে বসে আছে অভ্র। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। হাতে কলম আর ডায়েরী। মনে হয় কিছু লেখার চেষ্টা করছে।
একটু পর সে উঠে দাঁড়ালো। আকাশ মেঘলা। ঠান্ডা বাতাস বইছে। এতক্ষন বৃষ্টি ছিলো না। এখন ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। একটু পর হয়তো বৃষ্টির তোড় বেড়ে যাবে।

সবুজ গাছের পাতার উপর বৃষ্টি পড়ছে।গাছের পাতা গুলো দুলছে। অভ্র সে দৃশ্য দেখছে অবাক চোখে। হঠাৎ, তার মনে কিছু লাইন ভেসে উঠলো। আর সে লাইন গুলো স্থান পেলো তার ডায়েরীতে। এরপর সে হাঁটা শুরু করলো।

পেছন থেকে হঠাৎ মিলির গলা শোনা গেলো। মিলি তাকে ডাকছে। সে ফিরে তাকালো।
মিলি জিজ্ঞেস করলোঃ“কেমন আছো?”
অভ্রঃ“ভালো।”
মিলিঃ“ এতো দিন কলেজে এলে না যে?”
অভ্রঃ“জ্বর ছিলো।”
মিলিঃ“আমি বলেছিলাম না বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ করবে। দেখলে তো?”
অভ্র কিছু বললো না। চুপচাপ হাঁটছে। তার সাথে মিলিও হাঁটছে।
মিলিঃ“তা কোথায় যাচ্ছো?”
অভ্রঃ“কোথাও না।”
মিলি কিছুটা বিস্মিত হলো। তবে বিস্ময়ের ভাব তা চোখে মুখে নেই।
মিলিঃ“কোথাও না। মানে?”
অভ্রঃ“মানে কিছু না। এমনিই হাঁটছি।”
মিলিঃ“আচ্ছা, তুমি এভাবে হেঁটে কি আনন্দ পাও?”
অভ্রঃ“উদ্দেশ্যহীন ভাবে পথ চলার মাঝে আলাদা এক আনন্দ আছে। তখন কোন কাজের তাড়া থাকে না, থাকে না কোন চিন্তা। শুধু থাকে সীমাহীন পথ, উপরের বিশাল আকাশ আর আমি।”
অভ্র ও মিলি হাঁটছে। চারদিক স্তব্ধ। আকাশে মেঘ জমেছে। যার কারনে চারদিকে অন্ধকার বিরাজ করছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টি নামবে। বাতাস বইছে।
নিঃস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে দু’জন নিঃস্তব্ধ মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। 


To be continued..................
[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]


লেখকঃ জোহেব।

সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৪

অবহেলা (২য় পর্ব)



          অবহেলা (২য় পর্ব)
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
পরের দিন মিলি কলেজে গেলো। শহীদ মিনারের পাশের গাছটার নিচে অভ্র বসে আছে। কি যেন ভাবছে। হয় তো নতুন কোন কবিতা তৈরির চেষ্টা করছে। এমন সময় কাউকে বিরক্ত করা ঠিক নয়। এসব ভেবে মিলি আর অভ্রকে বিরক্ত ক্তলো না।
একটু পর কি যেন মনে করে সে আবার শহীদ মিনারের কাছে গেলো।
অভ্র এখনো বসে আছে। কি যেন ভাবছে। মিলি তার দিকে এগিয়ে গেলো।
একটু সামনে গিয়ে বললঃ “কেমন আছেন?”
অভ্রঃ “ভালো।”
মিলিঃ “আমি কি একটু বসতে পারি?”
অভ্রঃ“বসুন।”
মিলিঃ“আপনি কালকে ডায়েরীটা ছাদে ফেলে গিয়েছিলেন। সেটা দিতে এলাম।”
আভ্রঃ“ধন্যবাদ।”
মিলিঃ“আপনি তো খুব সুন্দর কবিতা লিখেন।”
অভ্র কিছু বললো না। অভ্রর মতে নির্বোধরাই বেশি কথা বলে। এ মেয়েটিকে ও নির্বোধদের কাতারেই ফেলা যায়।
মিলিঃ“বাই দা ওয়ে! আমি মিলি। আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি”।
অভ্রঃ“অবশ্যই পারেন।”
মিলিঃ“আপনি এতো সুন্দর কবিতা লিখেন আগে জানতাম না”।
অভ্রঃ“আমাকে আপনি না বলে তুমি করে বললে খুশি হবো। ঠিক আছে এখন যাই”।
মিলিঃ“ঠিক আছে। তুমি করেই বলবো। তবে এখন কোথায় যাচ্ছো? ক্লাস করবে না”।
অভ্রঃ“ক্লাস করতে ভালো লাগছে না।”
অভ্র চলে গেলো। মিলি ও কিছুক্ষন গাছ তলায় বসে থেকে ক্লাসে চলে গেলো।

ক্লাসে মিলির বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে। মিলিকে দেখে একজন বললোঃ “কিরে। ওইখানে বসে কি করছিলি? ওই ক্ষ্যাতটার সাথে কথা বলছিলি?”
মিলি রেগে গিয়ে বললোঃ“ কিসের ক্ষ্যাত? ক্ষ্যাত মানে তো জমি। মানুষ আবার ক্ষ্যাত হয় নাকি?”
তাদের মাঝে আরেক জন বলে উঠলোঃ“আরে হয় হয়। দেখিস না অভ্র কেমন ক্ষ্যাতের মতো চলে।”
মিলিঃ“অভ্র ক্ষ্যাত নয়। সে একজন সাদা মনের মানুষ। তার মনে কোন হিংসা নেই, রাগ নেই, অহংকার নেই। একজন অন্য রকম মানুষ। তোদের সবার থেকে আলাদা। অন্তত তোদের মতো কোন কুটিলতা তার মাঝে নেই। আর নিজেদের মানুষিকতাটা একটু চেঞ্জ কর। পোশাক দিয়ে কখনো একজন মানুষকে বিচার করা যায় না।”
-“কিরে মিলি রেগে গেলি মনে হয়?”
-“না রাগিনি।”

To be continued...........
[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]


লেখকঃ জোহেব।



 

শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৪

অবহেলা (প্রথম পর্ব)



অবহেলা (প্রথম পর্ব)
------------------------------------------------------------

সকাল বেলা অভ্রর ঘুম ভাঙলো দরজার শব্দে। কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে। অভ্রর আবার গাঢ় ঘুম। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে যে কোন মানুষেরই বিরক্ত হওয়ার কথা।অভ্রর মুখেও বিরক্তির ভাব ফুটে উঠেছে।
অভ্র জিজ্ঞেস করলোঃ “কে?”
দরজার ওপাশ থেকে উত্তর এলোঃ “আমি”।
অভ্রঃ “মা এতো সকাল সকাল ডাকছো কেনো?”
মাঃ “ এতো সকাল কোথায়? ৯.০০টা বাজে। কলেজে যাবি না?”
অভ্রঃ “হুম যাবো”।
মাঃ “তাড়াতাড়ি উঠে মুখ ধুয়ে টেবিলে আয় নাস্তা টেবিলে দেয়া আছে”।
অভ্রঃ “ঠিক আছে আসছি”।
মুখে বিরক্তির ভাব নিয়ে অভ্র বিছানা থেকে নামলো। সকাল বেলা এতো নিয়ম মেনে চলতে তার ভালো লাগে না। সকাল বেলার একটি আলাদা বৈশিষ্ট আছে।
এ সময় মানুষ থাকবে তার নিজের মতো, অন্যের নিয়মে নয়।
মুখ ধুয়ে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলো অভ্র। বাইরে প্রচুর রোদ। গ্রীষ্মের কাঠ পোড়া রোদ। এ রোদে সাধারণত রাস্তার পিচ গলে যায়। তবে এখন আর গলে না।
এ রোদে মানুষ ছায়া খোঁজে। তবে অভ্রর ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না।
সে অতি আনন্দের সাথেই রোদ উপভোগ করছে।
অভ্র একজন কবি। তার মতেঃ “প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুর মাঝেই আনন্দ রয়েছে। তবে সে আনন্দ খুব কম মানুষই উপভোগ করতে পারে”।
কলেজের সামনে এসে তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
অভ্র একজন অতি সাধারণ ছেলে। দশ জন সাধারণের চেয়েও সাধারণ। যাকে অতি সাধারণ বলা যায়।
সে সাধারণত একা থাকতেই পছন্দ করে। সব সময় চুপচাপ থাকে, কবিতা লিখে, বসে বসে কি যেন ভাবে।
দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো, কলেজে তার তেমন ভালো কোন বন্ধু নেই।
সে একজন অতি সাধারণ মানুষ তাই তার সাথে কেউ মিশে না। তার মতো বাউন্ডুলের সাথে মিশবে কে?

সে কলেজে ঢুকলো। অনাগ্রহের সাথে ক্লাস শেষ করে ছাদে উঠলো। ততক্ষণে, রোদ কিছুটা কমে গিয়েছে। সাধারণত এ সময় বৃষ্টি হয় না। তবে কেন যেনো আজ আকাশটা মেঘলা দেখাচ্ছে।

কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্র।আজ মনে হয় আকাশের মন ও খারাপ।
মাঝে মাঝে প্রকৃতি মানুষের মনের দুঃখ আঁচ করতে পারে।
ছাদে পা ঝুলিয়ে বসে অভ্র কবিতা লিখছে ডায়েরিতে।
হঠাৎ, তার মায়ের ফোন এলো। তাই, সে তাড়াতাড়ি করে যাওয়ার সময় তার ডায়েরিটা ফেলে গেলো।
এ ডায়েরিটাতেই সে কবিতা লিখে। তার মনের সকল সুখ-দুঃখ, আনন্দ বেদনাকে সে কাব্য রূপে ফুটিয়ে তোলে।

অন্যদিকে, মিলি ছাদে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।
হঠাৎ, তার এক বন্ধু বললঃ “দেখ! ওই দিকে একটা ডায়েরী পড়ে আছে”।
মিলিঃ “হুম। তাই তো। চলতো দেখি কার ডায়েরী?”
ডায়েরীটি পড়ে আছে রেলিং এর কাছে। মিলি ডায়েরীটি হাতে নিলো। খুলে দেখলো অভ্রর নাম।
এতক্ষন, সবাই ডায়েরীটার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছিলো। তবে যখনই দেখলো অভ্রর নাম তখানই তারা সবাই ভ্রু কুচকালো। শুধু মিলিই ভ্রু কুচকালো না।
সে ডায়েরীটা তার সাথে করে নিয়ে গেলো। কাল অভ্র আসলে তাকে ডায়েরীটা দিতে হবে। তবে ডায়েরীটা আর খুলে দেখা হলো না।

রাতে মিলি ডায়েরীটা খুললো। সাধারণত সে কারো ডায়েরী পড়ে না। তবে আজ কি মনে করে যেনো খুললো।
অসংখ্য কবিতা অভ্রর ডায়েরীতে। মিলি একে একে সব গুলো কবিতা পড়তে লাগলো। আবেগ মিশ্রিত করে লিখা সব কবিতা। যা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
এ কবিতা গুলো মিলির হৃদয় ছুঁয়ে গেলো।
এতো সুন্দর করে এই সরল ছেলেটা কিভাবে লিখে- মিলি ভাবতে থাকে।
কবিতা গুলোর মাধ্যমে তার মনের সরলতা ও শুভ্রতার প্রকাশ পায়।


To be continued...........
[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]

লেখকঃ জোহেব।