সুয়া চান পাখি! গানটা শুনলেই মনের ভিতরটা হুহু করে কেঁদে
উঠে। তবে আমরা কি জানি যে এই গানটির পেছনে রয়েছে এক বেদনাময় ইতিহাস।
“সুয়া চান পাখি” এর অর্থ হল শুয়ে আছে আমার চান পাখি।
এক সময়কার বাউল গায়ক ছিলেন ওস্তাদ উকিল মুন্সি। তিনি তার
স্ত্রীকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে এক গানের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন
সময়ে খবর এলো যে তার স্ত্রী আর এ পৃথিবীতে নেই।
উনি যে যায়গায় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সে যায়গাটি ছিলো তার
বাড়ি থেকে অনেক দূরে। যার ফলে ফিরতে কয়েকদিন সময় লেগে গেলো।
ততদিনে তার স্ত্রীকে কবর দেয়া হয়ে গিয়েছে। তিনি তার
স্ত্রীকে শেষ বারের মতোও দেখতে পারেন নি।
তখন তিনি তার স্ত্রীর কবরের পাশে বসে গেয়েছিলেনঃ
“সুয়া চান পাখি,
“সুয়া চান পাখি,
আমার সুয়া চান পাখি।
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছ নাকি?
তুমি আমি জনম ভরা,
ছিলাম মাখামাখি।
আজি কেন হইলে নীরব,
মেলো দুটি আখিরে রে,
পাখি।
আমি ডাকিতাছি,
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছ নাকি?
বুলবুলি আর তোতা ময়না,
কত নামে ডাকি।
তোরে কত নামে ডাকি।।
শিকল কেটে চলে গেলে রে,
শিকল কেটে চলে গেলে,
কারে লইয়া থাকিরে পাখি।
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছ নাকি?
তোমার আমার এই পিরীতি,
চন্দ্র, সুর্য সাক্ষী।
হঠাৎ করে চলে গেলে,
বুঝলাম না চালাকি।
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছো নাকি।”
তখন উকিল মুন্সির গুরু বাউল কবি রশিদ উদ্দীন সে স্থানে
ছিলেন। উকিল মুন্সিকে এভাবে কাঁদতে দেখে তাকে সান্তনা দেয়ার জন্য তিনি গেয়েছিলেনঃ
“বিশ্ব জোড়া এই পিরীতি,
সবই দেখছি ফাঁকি রে উকিল মুন্সি।
সবই দেখছি ফাঁকি।।
বাউল রশিদ বলে,
চলরে উকিল।
বাউল রশিদ বলে,
চলরে উকিল।
ওরে উকিল।।
ডাকলেই বা হইবো কি,
তারে ডাকলেই বা হইবো কি?
আমি ডাকিতাছি,
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছ নাকি?”
লেখকঃ জোহেব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন