সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

অবহেলা (৭ম পর্ব)






অবহেলা (৭ম পর্ব)

চারি দিকে ফুটে উঠেছে ভোরের আলো। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো মিলির। কাল রাতে জোছনা দেখতে দেখতে কখন যে বারন্দার ইজি চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই।
আজ কেনো যেনো তার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে সব না বলা কথা গুলো অভ্রকে বলে দিতে। তবে সে তো আর অভ্র নয় যে হাঁটতে হাঁটতে কবিতা লিখে ফেলবে। কিছুক্ষন বসে বসে কল্পনার জগতে পদচারন করে মিলি। খুঁজতে থাকে ছন্দ।
তবে সব গুলো কথা ছন্দে মিলছে না। ঘর থেকে খাতা এনে লিখলো ৮ লাইনের একটি কবিতা।

আজ অভ্রকে কবিতাটা পাঠাবে সে। মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে লিখে ফেললো। কয়েকবার পাঠাতে গিয়েও পাঠাতে পারে নি। কেমন যেনো একটা ভয় কাজ করছে তার মাঝে। অভ্রকে হারানোর ভয়। কিছুক্ষন পর ম্যাসেজটা পাঠিয়েই দিলো। অপেক্ষা করতে থাকলো ম্যাসেজ এ উত্তর এর। তবে উত্তর এলো না।


বিকেলেঃ
________________

অভ্র বসে আছে লেকের পাড়ে। আজ তার হাতে কবিতার ডায়েরী নেই। বিকেলের সোনালী আলো গড়িয়ে পড়ছে লেকের পানিতে। সে পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছে অভ্র।

“কেমন আছো অভ্র?”
অভ্র ফিরে তাকালো। মিলি দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্রঃ“ভালো। বসো...”
মিলিঃ“ম্যাসেজটা পেয়েছো?”
অভ্রঃ“হুম। দেখেছি।”
মিলিঃ“তো...”
অভ্রঃ“মিলি। একটা কথা বলবো?”
মিলিঃ“বলো...”
অভ্রঃ“দেখো মিলি। একে ভালোবাসা বলে না। একে বলে মোহ। এখন তুমি মোহের ঘোরে বলছো ভালোবাসি। তবে যখন মোহ কেটে যাবে, তখন আর ভালোবাসাটা থাকবে না।”
মিলিঃ“আমি তো মোহের ঘোরে বলছি না।”
অভ্রঃ“তা সবার মতে তো আমি একজন বিরক্তিকর মানুষ। তা আমাকে তোমার ভালো লাগলো কি ভাবে?”
মিলিঃ“তুমি মোটেও বিরক্তিকর নও। তুমি এমন একজন মানুষ যে সবার থেকে আলাদা। সবাই এক পথে চলে। তবে তোমার পথ ভিন্ন। তোমার নিজের পথটা সবার চেয়ে আলাদা।”
অভ্রঃ“হতে পারে। তবে এ পথে তুমি যে আমার সাথী হতে চাচ্ছো, তা কি বোকামি নয়?”
মিলিঃ“মোটেও বোকামি নয়।”
অভ্রঃ“নিজের ভালোবাসাটা কে এভাবে অপাত্রে দান করো না।”
মিলিঃ“যে এতো সুন্দর করে লিখতে পারে, সে কখনো অপাত্র হতে পারে না। যার মাঝে একটা কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ হৃদয় ও শিল্পি মন আছে সে কখনো অপাত্র হতে পারে না।”
অভ্রঃ“মিলি! তুমি ভুল করছো। আমি হলাম তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়ের কবির মতো। কোন এক গল্পের চরিত্র। এখন তুমি মোহের ঘোরে এসব বলছো। যখন মোহ কেটে যাবে, তখন আর এই ভালোবাসাটা থাকবে না।”
অভ্র হেঁটে চলে যায়। মিলিও আর কিছু বলে না। বসে বসে তার চলে যাওয়া দেখে।


To be continued..................

[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]


লেখকঃ জোহেব।


শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ইতিহাসের পাতায় এক ফোঁটা অশ্রু







ইতিহাসের পাতায় এক ফোঁটা অশ্রু
-----------------------------------------------------------------------------
বাদশাহ আকবর বসে আছেন আসনেবছরের প্রথম দিনরাজ্য জুড়ে বয়ে চলেছে আনন্দের বন্যাসরাবের নেশায় প্রাসাদের সবাই মোহগ্রস্থ
জলসা ঘরে হঠাৎ করে ধোঁয়াশোনা যাচ্ছে নুপুরের ধ্বনিযা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেধোঁয়া যতই কমছে ততই সকলের সামনে সব দৃশ্যমান হচ্ছেকেউ এক জন দাঁড়িয়ে আছে মাথায় ঘোমটা দিয়েহঠাৎ তার মুখ থেকে গানের সুর শোনা গেলো
বড়ই মধুর সুরসকলে তাকিয়ে আছে সামনে আর মুগ্ধ হয়ে শুনছে সেই গানের সুর যা হৃদয় কেড়ে নেয়
আনার কলির মাথা থেকে ঘোমটা উঠে গেলোশুরু হল নাচের ধুন
আনার কলির ঘোমটা গিয়ে পড়লো শাহজাদা সেলিমের কাছেশাহজাদা মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে আনার কলিকেএ যেনো কোন সর্গের অপ্সরীযার সুরেলা কন্ঠ আর মোহনীয় সৌন্দর্য কেড়ে নিলো শাহজাদার হৃদয়যার সৌন্দর্য দেখলে শুধু মন চায় চেয়ে থাকতেযাকে চাঁদের উপমা দিলেও কম হয়
সেদিন শাহজাদা সেলিমের পলক নড়লো নাসে যে মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েছে
শাহজাদা মনে মনে আনারকলি কে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চাইলোতবে আনারকলির হেরেমে শুধু সম্রাট আকবর ঢুকতে পারতেনসেখানে অন্য কারো ঢুকা ছিলো নিষেধ
তবে শাহজাদাকে যে আনারকলির সাথে দেখা করতেই হবেতাই, সেলিম হেরেমের পাহাড়াদারদের ঘুষ দিয়ে আনারকলির সঙ্গে দেখা করলো
আনারকলির ও শাহজাদাকে ভালো লাগলোতবে তাদের দুজনকে যে কেউ মেনে নেবে না যেনেও তারা লুকিয়ে প্রেম করতে লাগলো
তখন আনারকলির বয়স ৪০ এর কাছাকাছিআর সেলিমের বয়স তখন ৩০
তবুও তাদের ভালোবাসার মাঝে বয়স কোন দিন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি
অন্যদিকে, সম্রাট আকবর শাহজাদা সেলিমের ঘনঘন হেরেমে যাওয়া দেখে সব বুঝতে পেরেছিলেন
এক দিন সেলিম হেরেমের পাহাড়াদারকে দিয়ে চিঠির মাধ্যমে আনারকলিকে রাতে নদীর পাশের মন্দিরের কাছে ডাকলআনারকলিও লুকিয়ে শাহজাদার সঙ্গে দেখা করতে গেলো সেখানে
তবে সম্রাট আকবর সবই টের পেয়েছিলেনসেদিন সেলিম ও আনারকলিকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তিনি
শাহজাদার সঙ্গে প্রেমের অপরাধে সেদিন আকবর আনারকলিকে হত্যা করলেন সেলিমের চোখের সামনে
বহুদিন কেটে গেলোতবে সেলিম তার ভালোবাসার মানুষটিকে ভুলতে পারে নিতাই, সে লাহোরে তার ভালোবাসার মানুষটির স্মরণে তৈরি করলো স্মৃতি সৌধ
স্মৃতিসৌধের এক দিকে লেখা আছে আল্লাহর ৯৯টি নাম
অন্যদিকে লেখা আছে দু'লাইন ফরাসি কবিতাঃ
"তা কিয়ামাত শুকর গুইয়াম কারদিগারি কিশ রা
আহ, গার মান বাজ বিনাম রু ইয়ার-ই-খুশ রা।"
যার বঙ্গানুবাদ হয়ঃ
" একবার, আর একবার দেখতে পাই প্রিয়তমার মুখ যদি
ঈশ্বর তোমার নাম ডেকে যাবে হৃদয় কেয়ামত অবধি।"

লেখকঃ জোহেব

সেদিন খুঁজবে আমায়






সে দিন খুঁজবে আমায়
কবিঃ জোহেব

সেদিন তুমি খুঁজবে আমায়,
বসন্তের ফুলে।
সেদিন তুমি খুঁজবে আমায়,
কোন এক বর্ষা সকালে।
সেদিন তুমি খুঁজবে আমায়,
কোন এক বৃষ্টি বিলাসী বিকেলে।
সেদিন তুমি খুঁজবে আমায়,
শরতের কাশ ফুলে।
কখনো বা খুঁজবে আমায়,
কোন এক জোছনা রাতে।

সেদিন তুমি কোথাও আমায়,
পাবে নাকো খুঁজে।
যদি কখনো কাঁদে মন,
খুঁজে নিয়ো আমার,
আকাশের নক্ষত্রদের মাঝে।
সেদিন কাঁদবে তুমি,
তোমার চোখ হতে গড়াবে অশ্রু।
আবারো বেজে উঠবে আমার সেই,
বেহালার করুণ সুর।
কাঁদবে তুমি ব্যাকুল হয়ে,
গড়িয়ে পড়বে অশ্রু,
তোমার কপোল বেয়ে।

তবে আফসোস-
তখন তোমার অশ্রু,
পারবো না মুছতে আমি।
ততদিনে অন্য কোন জগত,
দিচ্ছে আমায় হাতছানি।
যে জগত হতে,
আজো কেউ ফিরতে পারে নি।

শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

অবহেলা (৬ষ্ঠ পর্ব)






অবহেলা (৬ষ্ঠ পর্ব)
--------------------------------------------------------------------------------

অভ্র বসে আছে লেকের পাড়ে। হাতে কবিতার ডায়েরী। তবে আজকে কি নিয়ে লিখবে খুঁজে পাচ্ছে না। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখছে। এখনো সন্ধ্যা হয় নি, তবে তারা নীড়ে ফিরে যাওয়া শুরু করেছে।
আসলে প্রকৃতির মাঝে বৈচিত্রময়তা আছে বলেই পৃথিবী আমাদের কাছে এতো সুন্দর মনে হয়।

হঠাৎ, পেছন থেকে মিলির গলা শোনা গেলো।
মিলিঃ “কি কবি সাহেব কি করছেন।”
অভ্রঃ “কিছু না, বসো।”
মিলিঃ “তা কি লিখলে দেখি।”
অভ্রঃ “কিছুই না।”
মিলিঃ “কেনো? লিখার কোন বিষয় খুঁজে পাচ্ছো না বুঝি?”
অভ্রঃ “হুম।”
মিলিঃ “কেনো?”
অভ্রঃ “আসলে বুঝতে পারছি না। তাছাড়া, আজ কেনো যেনো লিখতে ইচ্ছে করছে না।”
মিলিঃ “হুম। তো কি ইচ্ছে করছে?”
অভ্রঃ “ইচ্ছে করছে এখানেই বসে থাকি। এভাবেই এখানে বসে বসে বিকেলের আকাশে ক্লান্ত পাখিদের নীড়ে ফেরা দেখি।”
মিলিঃ “তবে পাখিরাতো সন্ধ্যা ঘনালে নীড়ে ফিরে। তা হলে কিছু পাখিদের এমন অসময়ে নীড়ে ফিরতে দেখা যায় কেনো?”
অভ্রঃ “এটাই প্রকৃতির বৈচিত্রতা। এ বৈচিত্রতার কারনেই প্রকৃতির সব কিছু আমাদের কাছে ভালো লাগে।এ বৈচিত্রতা না থাকলে প্রকৃতি একঘেয়ে হয়ে যেতো।”
মিলিঃ “হুম। আচ্ছা, তুমি জোছনা পছন্দ করো?”
অভ্রঃ “হুম। আমি জোছনা রাতে বাঁশি বাজাই। জোছনা রাতই বাঁশি বাজানোর জন্য উত্তম। কারন, তখন চাঁদের আলো আর বাঁশির সুর মিলে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি করে।”
মিলিঃ “আচ্ছা, জোছনা রাতেই বাঁশি বাজানোর কারন কী? অন্য সময় বাজাও না কেনো?”
অভ্রঃ“মিলি তুমি হয়তো জানো যে পৃথিবীতে আমার বন্ধুর খুবই সংখ্যা কম। এ কম সংখ্যক বন্ধুদের মাঝে চাঁদ ও আমার বন্ধু। আমি চাঁদের সাথে কথা বলি। তার ভাষা হল জোছনা আর আমার ভাষা হল সুর।”

প্রতিবারের মতো এবার ও মিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। প্রতিবারই তার কেনো যেনো অভ্রকে নতুন বলে মনে হয়। প্রিয় মানুষদের প্রতিদিন নতুন করে আবিস্কারের মাঝে আলাদা এক আনন্দ আছে।

To be continued.........
[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে।]

লেখকঃ জোহেব।

সুয়া চান পাখি গানের ইতিহাস








সুয়া চান পাখি গানের ইতিহাস

সুয়া চান পাখি! গানটা শুনলেই মনের ভিতরটা হুহু করে কেঁদে উঠে। তবে আমরা কি জানি যে এই গানটির পেছনে রয়েছে এক বেদনাময় ইতিহাস।
“সুয়া চান পাখি” এর অর্থ হল শুয়ে আছে আমার চান পাখি।
এক সময়কার বাউল গায়ক ছিলেন ওস্তাদ উকিল মুন্সি। তিনি তার স্ত্রীকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে এক গানের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে খবর এলো যে তার স্ত্রী আর এ পৃথিবীতে নেই।
উনি যে যায়গায় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সে যায়গাটি ছিলো তার বাড়ি থেকে অনেক দূরে। যার ফলে ফিরতে কয়েকদিন সময় লেগে গেলো।
ততদিনে তার স্ত্রীকে কবর দেয়া হয়ে গিয়েছে। তিনি তার স্ত্রীকে শেষ বারের মতোও দেখতে পারেন নি।
তখন তিনি তার স্ত্রীর কবরের পাশে বসে গেয়েছিলেনঃ
“সুয়া চান পাখি,
আমার সুয়া চান পাখি।
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছ নাকি?

তুমি আমি জনম ভরা,
ছিলাম মাখামাখি।
আজি কেন হইলে নীরব,
মেলো দুটি আখিরে রে,
পাখি।
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছ নাকি?

বুলবুলি আর তোতা ময়না,
কত নামে ডাকি।
তোরে কত নামে ডাকি।।
শিকল কেটে চলে গেলে রে,
শিকল কেটে চলে গেলে,
কারে লইয়া থাকিরে পাখি।
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছ নাকি?

তোমার আমার এই পিরীতি,
চন্দ্র, সুর্য সাক্ষী।
হঠাৎ করে চলে গেলে,
বুঝলাম না চালাকি।
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছো নাকি।”

তখন উকিল মুন্সির গুরু বাউল কবি রশিদ উদ্দীন সে স্থানে ছিলেন। উকিল মুন্সিকে এভাবে কাঁদতে দেখে তাকে সান্তনা দেয়ার জন্য তিনি গেয়েছিলেনঃ

“বিশ্ব জোড়া এই পিরীতি,
সবই দেখছি ফাঁকি রে উকিল মুন্সি।
সবই দেখছি ফাঁকি।।
বাউল রশিদ বলে,
চলরে উকিল।
বাউল রশিদ বলে,
চলরে উকিল।
ওরে উকিল।।
ডাকলেই বা হইবো কি,
তারে ডাকলেই বা হইবো কি?
আমি ডাকিতাছি,
তুমি ঘুমাইছ নাকি?”


লেখকঃ জোহেব।

সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আজ না হয় নিজেকে নিয়েই লিখলাম


 
 
 
আজ না হয় নিজেকে নিয়েই লিখলাম
-----------------------------------------------------

চারিদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আলোকিত পৃথিবী ধীরে ধীরে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। তেমনি ভাবে দুঃখের অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে একটি জীবন। যা হয় তো আর কখনো আলোর মুখ দেখবে না।

জোহেব হাঁটছে লেকের পাড়ে। বুকের বাম পাশের চিন চিনে ব্যাথাটা ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। অতিপ্রিয় মানুষের কাছ থেকে পাওয়া কষ্ট কেউ সহ্য করতে পারে না। এ কষ্টের প্রভাব এতোই তীব্র হয় যে মানুষ তখন কাঁদতে পারে না।

হাঁটতে হাঁটতে নিজের লিখা কয়েকটি কবিতা আওড়ে যায় জোহেব। যে কবিতা গুলো এক সময় প্রিয় এক জনকে উৎসর্গ করেছিলো।
আশেপাশের মানুষগুলো তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ দেখছে উৎসুক দৃষ্টিতে। কেউ কেউ দেখছে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে। তারা ভাবছে যে পাগল প্রলাপ বকছে।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পরে গেলো সে। পা খানিকটা কেটে গিয়েছে। তবে তার কোন ব্যাথা অনুভুত হচ্ছে না। তার হৃদয়ের তীব্র ব্যাথার কাছে এ ব্যাথা কিছুই নয়।
আমাদের শরীরের কোন অংশ কেঁটে গেলে রক্তক্ষরণ হয়। যা সবাই দেখতে পায়। তবে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কেউ দেখতে পায় না।

সে উঠে দাঁড়ালো। এরপর কিছুক্ষন লেকের পানির দিকে তাকিয়ে রইলো।
আজ তার মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে সত্যিকারের প্রেমীকের স্থান শুধু গল্পে। যেখানে আবেগ গুলো শুধু বইয়ের পাতার মাঝেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে এর কোন অস্তিত্য নেই। ভালোবাসা নামক বস্তুটাকে আজ তার কেবল একটি কুসংস্কার বলেই মনে হয়।

লেখকঃ জোহেব।

তোমার ওই মুখের হাসি




তোমার ওই মুখের হাঁসি
কবিঃ জোহেব
--------------------------------------

তোমার ওই মুখের হাসি,
আমি দেখতে ভালোবাসি।
তোমার ওই চোখের চাওয়া,
আমার মনে দেয় যে দোলা।
জীবনের এই পথে,
চলতে চাই তোমার সাথে।
চলবে কী তুমি এ পথ,
আমারি সাথে?

কখনো যদি হারাই পথ,
খুঁজে দিয়ো তুমি আমায় পথ।
কখনো যদি হারাই আঁধারে,
তুমি খুঁজে দিয়ো আলো আমারে।
এ ভাবে জীবনের পথে,
চলতে চাই তোমার সাথে।
চলবে কী তুমি এ পথ,
আমারি সাথে?

রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৪

অবহেলা (৫ম পর্ব)

                                                           


                           অবহেলা (৫ম পর্ব)

৬ মাস পর...

এই ৬ মাসে অভ্র ও মিলি খুব ভালো বন্ধ্য হয়ে গিয়েছে। এখন বেশির বাগ সময়ই তাদের দুজনকে এক সাথে দেখা যায়। বিশেষ করে বিকেলে, যখন অভ্র লেকের পাড়ে বসে কবিতা লিখে, মিলি তখন তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার কবিতা লেখা দেখে মুগ্ধ চোখে।
কখনো বা কোন বৃষ্টি দিনে অভ্রকে দেখা যায় কদম ফুল হাতে মিলির জন্য অপেক্ষা করতে। মিলির কদম ফুল খুব প্রিয়। এ ফুল খোপার দিলে তাকে অপ্সরীর মত লাগে।

মিলির মতে অভ্র এক জন অসাধারণ মানুষ। যদিও অভ্র একজন অতি সাধারণ ছেলে। অতি সাধারণরা ও অসাধারণ হয়। তারা তাদের অতি সাধারণের দিক দিয়েই অসাধারণ।

মিলি যতক্ষন অভ্রর সাথে থাকে ততক্ষণ তার মাঝে এক অন্য রকম অনুভুতি কাজ করে। এ অনুভুতিটার মানে তার জানা নেই।
সে মাঝে মাঝে ভাবে, এ রকম অনুভব হওয়ার কারন কী? এর নামই কি ভালোবাসা?
সে উত্তর খুঁজে পায় না। হয় তো এর নামই ভালোবাসা।

পরে মিলি নিজের কাছেই তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়। এর নামই ভালোবাসা। তবে অভ্র কি তাকে ভালোবাসে?
মিলি ভাবতে থাকে...
অভ্র তো একজন কবি। কবিরা তো আকাশের কান্না শুনে, বৃক্ষের সাথে কথা বলে, পাখিদের গান শোনে। প্রকৃতি তাদেরকে সে প্রখর অনুভব শক্তি দান করেছে।
তা হলে সে কেনো মিলির ভালোবাসাটা অনুভব করতে পারছে না?- মিলি বসে বসে এসব ভাবে।

ঘড়ির কাটায় তখন রাত ১২.৩০। মিলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে কি সুন্দর জোছনা। চার দিকে সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
মিলি এক বার ভাবে অভ্রকে ফোন দিবে। তবে, মোবাইলটা হাতে নেয়ার পরও ফোন দেয় না।

এতো সুন্দর জোছনা রাত। অভ্র নিশ্চয়ই এখন কবিতা লেখা নিয়ে ব্যাস্ত। কারন, এতো সুন্দর জোছনা খুব কমই দেখা যায়। এখন অভ্রকে বিরক্ত করাটা ঠিক হবে না।

মিলি দাঁড়িয়ে থাকে বারান্দায়। জোছনা ধরার চেষ্টা করে। তবে সে চেষ্টা বিফল হয়।


To be continued..................

[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]


লেখকঃ জোহেব।


মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

অবহেলা (৪র্থ পর্ব)



                                            


                                  অবহেলা (৪র্থ পর্ব)

কলেজের পেছনের পুকুর পাড়ে বসে আছে অভ্র। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। হাতে কলম আর ডায়েরী। মনে হয় কিছু লেখার চেষ্টা করছে।
একটু পর সে উঠে দাঁড়ালো। আকাশ মেঘলা। ঠান্ডা বাতাস বইছে। এতক্ষন বৃষ্টি ছিলো না। এখন ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। একটু পর হয়তো বৃষ্টির তোড় বেড়ে যাবে।

সবুজ গাছের পাতার উপর বৃষ্টি পড়ছে।গাছের পাতা গুলো দুলছে। অভ্র সে দৃশ্য দেখছে অবাক চোখে। হঠাৎ, তার মনে কিছু লাইন ভেসে উঠলো। আর সে লাইন গুলো স্থান পেলো তার ডায়েরীতে। এরপর সে হাঁটা শুরু করলো।

পেছন থেকে হঠাৎ মিলির গলা শোনা গেলো। মিলি তাকে ডাকছে। সে ফিরে তাকালো।
মিলি জিজ্ঞেস করলোঃ“কেমন আছো?”
অভ্রঃ“ভালো।”
মিলিঃ“ এতো দিন কলেজে এলে না যে?”
অভ্রঃ“জ্বর ছিলো।”
মিলিঃ“আমি বলেছিলাম না বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ করবে। দেখলে তো?”
অভ্র কিছু বললো না। চুপচাপ হাঁটছে। তার সাথে মিলিও হাঁটছে।
মিলিঃ“তা কোথায় যাচ্ছো?”
অভ্রঃ“কোথাও না।”
মিলি কিছুটা বিস্মিত হলো। তবে বিস্ময়ের ভাব তা চোখে মুখে নেই।
মিলিঃ“কোথাও না। মানে?”
অভ্রঃ“মানে কিছু না। এমনিই হাঁটছি।”
মিলিঃ“আচ্ছা, তুমি এভাবে হেঁটে কি আনন্দ পাও?”
অভ্রঃ“উদ্দেশ্যহীন ভাবে পথ চলার মাঝে আলাদা এক আনন্দ আছে। তখন কোন কাজের তাড়া থাকে না, থাকে না কোন চিন্তা। শুধু থাকে সীমাহীন পথ, উপরের বিশাল আকাশ আর আমি।”
অভ্র ও মিলি হাঁটছে। চারদিক স্তব্ধ। আকাশে মেঘ জমেছে। যার কারনে চারদিকে অন্ধকার বিরাজ করছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টি নামবে। বাতাস বইছে।
নিঃস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে দু’জন নিঃস্তব্ধ মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। 


To be continued..................
[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]


লেখকঃ জোহেব।

সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৪

অবহেলা (২য় পর্ব)



          অবহেলা (২য় পর্ব)
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
পরের দিন মিলি কলেজে গেলো। শহীদ মিনারের পাশের গাছটার নিচে অভ্র বসে আছে। কি যেন ভাবছে। হয় তো নতুন কোন কবিতা তৈরির চেষ্টা করছে। এমন সময় কাউকে বিরক্ত করা ঠিক নয়। এসব ভেবে মিলি আর অভ্রকে বিরক্ত ক্তলো না।
একটু পর কি যেন মনে করে সে আবার শহীদ মিনারের কাছে গেলো।
অভ্র এখনো বসে আছে। কি যেন ভাবছে। মিলি তার দিকে এগিয়ে গেলো।
একটু সামনে গিয়ে বললঃ “কেমন আছেন?”
অভ্রঃ “ভালো।”
মিলিঃ “আমি কি একটু বসতে পারি?”
অভ্রঃ“বসুন।”
মিলিঃ“আপনি কালকে ডায়েরীটা ছাদে ফেলে গিয়েছিলেন। সেটা দিতে এলাম।”
আভ্রঃ“ধন্যবাদ।”
মিলিঃ“আপনি তো খুব সুন্দর কবিতা লিখেন।”
অভ্র কিছু বললো না। অভ্রর মতে নির্বোধরাই বেশি কথা বলে। এ মেয়েটিকে ও নির্বোধদের কাতারেই ফেলা যায়।
মিলিঃ“বাই দা ওয়ে! আমি মিলি। আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি”।
অভ্রঃ“অবশ্যই পারেন।”
মিলিঃ“আপনি এতো সুন্দর কবিতা লিখেন আগে জানতাম না”।
অভ্রঃ“আমাকে আপনি না বলে তুমি করে বললে খুশি হবো। ঠিক আছে এখন যাই”।
মিলিঃ“ঠিক আছে। তুমি করেই বলবো। তবে এখন কোথায় যাচ্ছো? ক্লাস করবে না”।
অভ্রঃ“ক্লাস করতে ভালো লাগছে না।”
অভ্র চলে গেলো। মিলি ও কিছুক্ষন গাছ তলায় বসে থেকে ক্লাসে চলে গেলো।

ক্লাসে মিলির বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে। মিলিকে দেখে একজন বললোঃ “কিরে। ওইখানে বসে কি করছিলি? ওই ক্ষ্যাতটার সাথে কথা বলছিলি?”
মিলি রেগে গিয়ে বললোঃ“ কিসের ক্ষ্যাত? ক্ষ্যাত মানে তো জমি। মানুষ আবার ক্ষ্যাত হয় নাকি?”
তাদের মাঝে আরেক জন বলে উঠলোঃ“আরে হয় হয়। দেখিস না অভ্র কেমন ক্ষ্যাতের মতো চলে।”
মিলিঃ“অভ্র ক্ষ্যাত নয়। সে একজন সাদা মনের মানুষ। তার মনে কোন হিংসা নেই, রাগ নেই, অহংকার নেই। একজন অন্য রকম মানুষ। তোদের সবার থেকে আলাদা। অন্তত তোদের মতো কোন কুটিলতা তার মাঝে নেই। আর নিজেদের মানুষিকতাটা একটু চেঞ্জ কর। পোশাক দিয়ে কখনো একজন মানুষকে বিচার করা যায় না।”
-“কিরে মিলি রেগে গেলি মনে হয়?”
-“না রাগিনি।”

To be continued...........
[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]


লেখকঃ জোহেব।



 

শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৪

অবহেলা (প্রথম পর্ব)



অবহেলা (প্রথম পর্ব)
------------------------------------------------------------

সকাল বেলা অভ্রর ঘুম ভাঙলো দরজার শব্দে। কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে। অভ্রর আবার গাঢ় ঘুম। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে যে কোন মানুষেরই বিরক্ত হওয়ার কথা।অভ্রর মুখেও বিরক্তির ভাব ফুটে উঠেছে।
অভ্র জিজ্ঞেস করলোঃ “কে?”
দরজার ওপাশ থেকে উত্তর এলোঃ “আমি”।
অভ্রঃ “মা এতো সকাল সকাল ডাকছো কেনো?”
মাঃ “ এতো সকাল কোথায়? ৯.০০টা বাজে। কলেজে যাবি না?”
অভ্রঃ “হুম যাবো”।
মাঃ “তাড়াতাড়ি উঠে মুখ ধুয়ে টেবিলে আয় নাস্তা টেবিলে দেয়া আছে”।
অভ্রঃ “ঠিক আছে আসছি”।
মুখে বিরক্তির ভাব নিয়ে অভ্র বিছানা থেকে নামলো। সকাল বেলা এতো নিয়ম মেনে চলতে তার ভালো লাগে না। সকাল বেলার একটি আলাদা বৈশিষ্ট আছে।
এ সময় মানুষ থাকবে তার নিজের মতো, অন্যের নিয়মে নয়।
মুখ ধুয়ে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলো অভ্র। বাইরে প্রচুর রোদ। গ্রীষ্মের কাঠ পোড়া রোদ। এ রোদে সাধারণত রাস্তার পিচ গলে যায়। তবে এখন আর গলে না।
এ রোদে মানুষ ছায়া খোঁজে। তবে অভ্রর ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না।
সে অতি আনন্দের সাথেই রোদ উপভোগ করছে।
অভ্র একজন কবি। তার মতেঃ “প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুর মাঝেই আনন্দ রয়েছে। তবে সে আনন্দ খুব কম মানুষই উপভোগ করতে পারে”।
কলেজের সামনে এসে তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
অভ্র একজন অতি সাধারণ ছেলে। দশ জন সাধারণের চেয়েও সাধারণ। যাকে অতি সাধারণ বলা যায়।
সে সাধারণত একা থাকতেই পছন্দ করে। সব সময় চুপচাপ থাকে, কবিতা লিখে, বসে বসে কি যেন ভাবে।
দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো, কলেজে তার তেমন ভালো কোন বন্ধু নেই।
সে একজন অতি সাধারণ মানুষ তাই তার সাথে কেউ মিশে না। তার মতো বাউন্ডুলের সাথে মিশবে কে?

সে কলেজে ঢুকলো। অনাগ্রহের সাথে ক্লাস শেষ করে ছাদে উঠলো। ততক্ষণে, রোদ কিছুটা কমে গিয়েছে। সাধারণত এ সময় বৃষ্টি হয় না। তবে কেন যেনো আজ আকাশটা মেঘলা দেখাচ্ছে।

কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্র।আজ মনে হয় আকাশের মন ও খারাপ।
মাঝে মাঝে প্রকৃতি মানুষের মনের দুঃখ আঁচ করতে পারে।
ছাদে পা ঝুলিয়ে বসে অভ্র কবিতা লিখছে ডায়েরিতে।
হঠাৎ, তার মায়ের ফোন এলো। তাই, সে তাড়াতাড়ি করে যাওয়ার সময় তার ডায়েরিটা ফেলে গেলো।
এ ডায়েরিটাতেই সে কবিতা লিখে। তার মনের সকল সুখ-দুঃখ, আনন্দ বেদনাকে সে কাব্য রূপে ফুটিয়ে তোলে।

অন্যদিকে, মিলি ছাদে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।
হঠাৎ, তার এক বন্ধু বললঃ “দেখ! ওই দিকে একটা ডায়েরী পড়ে আছে”।
মিলিঃ “হুম। তাই তো। চলতো দেখি কার ডায়েরী?”
ডায়েরীটি পড়ে আছে রেলিং এর কাছে। মিলি ডায়েরীটি হাতে নিলো। খুলে দেখলো অভ্রর নাম।
এতক্ষন, সবাই ডায়েরীটার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছিলো। তবে যখনই দেখলো অভ্রর নাম তখানই তারা সবাই ভ্রু কুচকালো। শুধু মিলিই ভ্রু কুচকালো না।
সে ডায়েরীটা তার সাথে করে নিয়ে গেলো। কাল অভ্র আসলে তাকে ডায়েরীটা দিতে হবে। তবে ডায়েরীটা আর খুলে দেখা হলো না।

রাতে মিলি ডায়েরীটা খুললো। সাধারণত সে কারো ডায়েরী পড়ে না। তবে আজ কি মনে করে যেনো খুললো।
অসংখ্য কবিতা অভ্রর ডায়েরীতে। মিলি একে একে সব গুলো কবিতা পড়তে লাগলো। আবেগ মিশ্রিত করে লিখা সব কবিতা। যা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
এ কবিতা গুলো মিলির হৃদয় ছুঁয়ে গেলো।
এতো সুন্দর করে এই সরল ছেলেটা কিভাবে লিখে- মিলি ভাবতে থাকে।
কবিতা গুলোর মাধ্যমে তার মনের সরলতা ও শুভ্রতার প্রকাশ পায়।


To be continued...........
[বিঃদ্রঃ উপন্যাসের পরের অংশটি কাল এই ব্লগে প্রকাশিত হবে]

লেখকঃ জোহেব।

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০১৪

কল্পনায় ছুঁতে চাওয়া



                                            



কল্পনায় ছুঁতে চাওয়া
--------------------------------------------

ফেসবুকে মেসেজ চেক করতে গিয়ে সাব্বিরের চোখ আটকে গেলো একটি মেসেজ এর দিকে একটি অপরিচিত মেয়ের আইডি আইডি থেকে মেসেজটি পাঠানো হয়েছেম্যাসেজটিতে লিখাঃ"সাব্বির, আমি নিয়মিত আপনার লেখা গল্প গুলো পড়িআপনার গল্প গুলো আমার খুব ভালো লাগেআমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি?"
সাব্বির মাঝে মাঝে ফেসবুকে গল্প লিখেতার গল্প গুলো অনেক পেইজেই প্রকাশিত হয়
সাব্বিরের আইডিতে প্রতিদিন এমন অনেক মেসেজ ও অনেক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে তবে সে সব গুলো মেসেজ দেখে নাতবে আজ কেন যেনো এই মেসেজটা পড়লো
সাব্বির সাধারণত অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট Accept করে নাতবে আজ সে কি মনে করে যেনো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা Accept করলোএরপর সে মেয়েটির আইডিটিতে ঢুকলোমেয়েটির নাম নীলাতার আইডিতে ঢুকে তো সাব্বিরের চোখ আটকে গেলোসাব্বিরের লিখা প্রতিটি গল্পই নীলার Timeline Share করা
সাব্বির মনে মনে বললো, যাক! কেউ তো আমার লেখা গুলোর গুরুত্ব দেয়
এরপর সে ফেসবুক থেকে লগ আউট হয়ে গেলো

অন্যদিকে, নীলা ফেসবুকে ঢুকে দেখে সাব্বির তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট Accept করেছে
বিভিন্ন পেইজ গুলোতে সাব্বিরের লিখা গল্প গুলো পড়ে নীলা এক প্রকার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলো সাব্বিরের
তাই নীলা এখন অপেক্ষা করছে কখন সাব্বির অনলাইন এ আসবে আর কখন সে কথা বলবেনীলা অপেক্ষায় থাকে
কিন্তু সাব্বির একটি কাজে আটকা পড়ে যাওয়ার কারনে ফেসবুকে কয়েক দিন আসতে পারে নি
এ কয়েকদিন নীলা ফেসবুকে অপেক্ষা করতো, কখন সাব্বির অনলাইনে আসবেসারাদিন, সে সাব্বিরের আইডিতে ঘুরতোতার লেখা গুলো বারবার পড়তো

কয়েকদিন পরে সাব্বির বিকেলে অনলাইনে এলোতখন নীলা ও অনলাইনে আছে
নীলা সাব্বিরকে মেসেজ দিলোঃ" কবি সাহেব কেমন আছেন?"
মেসেজটি দেখে সাব্বির অবাক হয়ে গেলোএমন অদ্ভুত মেসেজ কেউ পাঠায়?
যাক অন্তত তার একজন ভক্ততো পাওয়া গেলো
এরপর থেকে প্রতিদিনই তাদের মাঝে নিয়মিত কথা হয়তারা দু'জনে কিছুদিনের মধ্যেই খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলোএভাবেই চলতে লাগলো

একদিন সাব্বির নীলার সাথে দেখা করতে চাইলোনীলাও রাজি হয়ে গেলোদীর্ঘ ৬ মাস ধরে তারা নিয়মিত চ্যাট করছে ও ফোনে কথা বলছেযার ফলে সাব্বির নীলার প্রতি এক রকম দুর্বলতা অনুভব করতে লাগলোসে বুঝতে পারলো সে নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছেতাই, সে ঠিক করলো যে দিন নীলার সাথে দেখা করবে, সে দিনই সে নীলাকে তার ভালোবাসার কথাটা জানাবে

সে দিন বিকেলে সাব্বির নীলার জন্য লেকের পাড়ে অপেক্ষা করছিলোহঠাৎ, পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলোঃ" কেমন আছেন কবি সাহেব ?"
সে পেছন ফিরে দেখলো নীলা তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেতাকে আজ আপ্সরীর মতো লাগছেযেন সৃষ্টিকর্তার তৈরি একটি সৌন্দর্য তার সামনেতার শুধু ইচ্ছে করছে দু'চোখ ভরে দেখতেসে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে
হঠাৎ, নীলা বলে উঠলোঃ" কি হলো কবি সাহেব কোথায় হারিয়ে গেলেন?"
সাব্বির নিজেকে সামলে নিয়ে বললোঃ" কেমন আছো?"
নীলাঃ" ভালোআপনি?"
সাব্বিরঃ" আমি ও ভালো আছি।"
নীলাঃ" হুমতা কবি সাহেবকে আজকে অন্যরকম লাগছে কেনো?"
সাব্বিরঃ" না এমনি।"
নীলাঃ" তা কোন কবিতা-টবিতা লিখছেন নাকি?"
সাব্বিরঃ" আজ সকালে একটা লিখলাম।"
নীলাঃ" ফেসবুকে দিয়েছেন ?"
সাব্বিরঃ" নাতবে কবিতাটা শুধু তোমার জন্য তাই তোমাকে ফেসবুকে কবিতাটা মেসেজ করেছি।"
ব্যাগ থেকে নীলা মোবাইলটা বের করে ফেসবুকে লগইন করতে গেলোকিন্তু সাব্বির তাকে বাধা দিয়ে বললোঃ" এখন নারাত ১২টার দিকে কবিতাটা পড়ো।"
নীলাঃ" ঠিক আছে।"

এরপর নীলা অপেক্ষা করতে লাগলো কখন রাত ১২টা বাজবে আর কখন সে মেসেজটা পড়বে
অন্যদিকে, সাব্বিরকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছেকারন, সাব্বির তার মনের কথা গুলো কবিতার মাধ্যমে নীলার কাছে প্রকাশ করেছেএখন নীলার উত্তর কি হবে? নীলা কি আমাকে ভালোবাসে? আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যাবে না তো? আরো অনেক প্রশ্নই তার মনে উঁকি দিতে লাগলো

রাত ১২টা বেজে গেছেসাব্বিরের কাছে মনে হচ্ছে তার হৃদস্পন্দন সে নিজেই শুনতে পাচ্ছেভয়ে ভয়ে সাব্বির ফেসবুকে লগইন করলোদেখলো একটা মেসেজ এসেছেভয়ে ভয়ে মেসেজটা খুললো
মেসেজটা পড়ে সে বুঝতে পারলো নীলাও তাকে ভালোবাসেযাক বাঁচা গেলোএতক্ষনে সাব্বির একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো

নীলা ছিলো সাব্বিরের জীবনের প্রথম ভালোবাসাআর সাব্বিরও ছিলো নীলার জীবনের প্রথম ভালোবাসাতারা দু'জন দু'জনকে অনেক ভালোবাসতো
নীলার প্রিয় ছিলো লাল গোলাপতাই, সাব্বির যখন নীলার সাথে দেখা করতো তখন তার জন্য একটি করে লাল গোলাপ নিয়ে যেতোআর সাথে থাকতো সাব্বিরের লিখা কবিতাএভাবেই চলতে থাকে
----
কিছুদিন পর নীলার বাবা ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়লোতাই, নীলার বড় ভাই সিদ্ধান্ত নিলো তার বাবার চিকিৎসা হবে আমেরিকায়তাই, তার পুরো পরিবারের আমেরিকা যাওয়া ঠিক হলোতবে নীলার সাব্বিরকে ছেড়ে যেতে মন চাইছে নাতবে তাকে তার বাবার চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যেতে হবে......
---
সকাল থেকেই সাব্বিরের মন খারাপকারন, আজ নীলা আমেরিকা যাচ্ছেযে নীলাকে ছেড়ে সে একদিনও থাকতে পারে না তাকে ছেড়ে সে এতো দিন থাবে কি করে
সাব্বির রেডি হয়ে রওনা দিলো এয়ারপোর্টের দিকেনীলাতো আর চিরদিনের জন্য আমেরিকা চলে যাচ্ছে নাতবুও সাব্বিরের মনে কেমন যেনো একটা ভয় হচ্ছেনীলাকে হারাবার ভয়
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সাব্বির পৌছে গেলো এয়ারপোর্টের সামনেট্যাক্সি থেকে নেমেই দেখলো নীলা এয়ারপোর্টের সামনে অপেক্ষা করছে
নীলার সামনে গিয়ে সাব্বির দাঁড়ালোদু'জন দু'জনের দিকে তাকিয়ে আছেতবে কেউই কিছু বলছে না
নীলার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে
হঠাৎ, সাব্বির বলে উঠলোঃ" চলে যাচ্ছো?"
নীলাঃ" কোথায় চলে যাচ্ছি? এইতো কিছুদিন পরই ফিরে আসবো।"
সাব্বিরঃ" তা হলে কাঁদছো যে?"
নীলাঃ" না এমনিইতুমি ও তো কাঁদছো।"
সাব্বির দেখলো মনের অজান্তে তার চোখ দিয়েও অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে
অশ্রু মুছতে মুছতে সাব্বির বললোঃ" কবে ফিরবে?"
নীলাঃ" ঠিক বলতে পারবো নাবাবা সুস্থ হলেই ফিরে আসবো।"
হঠাৎ, নীলার ভাই নীলাকে ডাকছে
নীলাঃ" আমার এখন যেতে হবেভালো থেকো

সাব্বির কিছু বললো নাদাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে নীলার চলে যাওয়া দেখলো
-------
নীলার বাবাকে আমেরিকার বড় এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হলোডাক্তার নানা পরীক্ষা করার পর বললোঃ" ওনার হাতে সময় খুব কম।"
সবাই যখন কান্নাকাটি করছে নীলার বাবা তখন নীলাকে ডাকলেন
নীলার বাবাঃ" মা রেডাক্তার বললো আমার হাতে আর বেশি দিন সময় নেই।"
নীলা কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ" এমন কথা মুখেও আনবে নাতোমার কিছু হবে না বাবা।"
নীলার বাবাঃ" আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো মৃত্যুর আগে তোর বিয়েটা দেখে যাবোতা আর হয়তো হবে নারে।"
নীলাঃ" না বাবা এমন কথা বলো না।"
নীলার বাবার ইচ্ছা তার বন্ধু সুজন সাহেবের ছেলে সায়মনের সাথে নীলার বিয়ে দিবে
নীলা আর তার বাবার শেষ ইচ্ছেটাকে ফিরিয়ে দিতে পারলো নাসে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো
-----
রীতি মতো আমেরিকাতেই সায়মনের সাথে নীলার বিয়ে সম্পন্ন হয়বিয়ের পরও নীলার প্রতিদিনই সাব্বিরের কথা মনে পড়েসে তার অতীতকে ভুলে বর্তমানকে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে
তবে, জীবনের প্রথম ভালোবাসাকে কি কেউ ভুলতে পারে

অন্যদিকে, নীলার এক বন্ধু সাব্বিরকে নীলার বিয়ের কথা জানায়, তবে সাব্বির তা বিশ্বাস করতে চায় নাসে ফেসবুকে নীলার জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু নীলার আইডিটা De-active
এক সময়ে সাব্বির এ সত্যটাকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করে তবে মাঝে মাঝে তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না যে, তার নীলা এখন আর তার নেই তার নীলা এখন অন্য কারো হয়ে গেছেসে ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে
সে প্রতিদিন প্রতিটি যায়গার বারবার নীলাকে খুঁজেহাজারো মানুষের মাঝে সে নীলাকে খুঁজে বেড়ায়

৫ বছর পর..............
নীলা তার স্বামীর সাথে বাংলাদেশে এসেছেএখন সে ভালোই আছেএখন আর তার পুরোনো কথা গুলো মনে পরে নাস্মৃতি গুলো সব ঝাপসা হয়ে গেছে
অন্যদিকে, সাব্বির এখনো পাগলের মতো তার নীলাকে সব যায়গায় খোঁজেসে এখনো বিশ্বাস করে তার নীলা একদিন ফিরবে

একদিন নীলা তার স্বামীর সাথে গাড়িতে করে এক যায়গায় যাচ্ছিলোতাদের সে দিন খুব তাড়া ছিলো
তাছাড়া ও সে দিন রাস্তাটা মোটামুটি ফাঁকাতাই, ড্রাইভার দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে লাগলো
হঠাৎ, তাদের গাড়ির সামনে একটি লোক পড়লোদ্রুত গতিতে থাকার কারনে ড্রাইভার ঠিক সময় মতো ব্রেক ধরতে পারে নিযার ফলে সেখনেই লোকটির এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো
ততক্ষনে সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়ে গিয়েছেনীলার স্বামী সায়মন সামনে গিয়ে দেখে আসলো
নীলা বললোঃ" কি হয়েছে?"
সায়মনঃ" আরে একটা পাগলের মতো লোক, বড় বড় চুল-দাড়িসে আমাদের গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করেছে।"
নীলাঃ" কই দেখি।"
নীলা ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখতে পেলো যে লোকটির এক্সিডেন্ট হয়েছে সে হচ্ছে তার পুরোনো ভালোবাসা সাব্বির
কেউ সাব্বিরকে চিনুক আর না চিনুক নীলা ঠিকই তার সাব্বিরকে চিনতে পেরেছে
সাব্বিরের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়ছেঅন্যদিকে, নীলা কাঁদতে কাদঁতে বললোঃ" সাব্বির! চোখ খোলো, দেখো আমি ফিরে এসেছিতোমার নীলা ফিরে এসেছে
সাব্বির কিছুক্ষনের জন্য চোখ খুললোসত্যিই তার বিশ্বাসই ঠিক ছিলো, তার নীলা তার কাছে ফিরে এসেছেতবে সাব্বিরের কাছে ধীরে ধীরে সব ঝাপসা হয়ে আসছেতার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে
নীলা বলছেঃ" চোখ খোলো সাব্বির! দেখো তোমার নীলা ফিরে এসেছে"
তবে নীলার কবি সাহেব যে আর কখনোই চোখ খুলবে নাসে যে না ফেরার দেশে চলে গেছে

লেখকঃ জোহেব